৯
পাবো এই বিশ্বাসটা থেকেই তো বেরিয়ে পড়া
দীর্ঘ শ্বাসাঘাতপ্রিয় এই প্রস্তরতা ঘিরে
কখনও পুড়ে যাওয়া অফিসবাড়িতে না মেলা মেয়ের মায়ের
ঘুরে বেড়ানো রেলস্টেশান
কখনও সিদ্ধার্থ বা শ্রীচৈতন্য
এরপর তীক্ষ্ণ আমিষ স্টিলের চাদর কে আকাশ বলে ডেকে উঠলে
রিভেট থেকে পেরেকের ঠিকরে ওঠা
উত্তাপের বশম্বদ কালো পাখি
নীল ধ্যাবড়া শিখার তাড়না পেয়ে কোথায় যে যায়!
আমাদের এইসব হ্রস্বদেহী সুরের খোলস
এদের কি গান বলা যাবে?
এরপরই একধরণের ভাষাহীনতার শব্দ ওঠে
পুরনো সমুদ্র থেকে যারা জ্বরের জাহাজে
ফিরে এসেছিল সঙ্গে ভারি ফল
রোগা মেয়েদের দীর্ঘশ্বাস
তাদেরই শরীরে আজ ধাতব আকাশ
একটানা রোদ লেগে ঝলসে উঠছে
পুরনো পাড়া নতুন তৈরি হওয়া চলাচল
এভাবেই বিকেলবিহীন দিন সিল্ক পুড়িয়ে চলে
আসলে বুকের ভিতরে একটা ব্লেড
দেবদূতের ফেলে যাওয়া পালক
অথচ তোমার রংচটা কোবাল্ট নীল
সাইকেল কোথাও চড়া সুর ধরে
একটানা বিলাবল বাঁধা থাকে বিকেল পর্যন্ত
এই যে উত্তাপ এই যে দ্বায়িত্ব পালন
লম্বা বৃষ্টিহীন মাঠে আঠালো সোনালি পর্দার ওপর
যে লোকটা দাঁড়িয়ে রইল তাকে কী বলবে?
১০
নির্মাণ করে নিয়েছি চলন
উদাসীনতার ফাঁকে ইলেকট্রনিক গান
দমকা টিয়াপাখি
কখনও কি স্পষ্ট হাওয়া দেয়?
দিক নির্দেশক কোনও ধুলো?
এইসব রাস্তাগুলো দিয়ে চিন্তা নিয়ে হাঁটা যায় না
অবরোহন বিঁধে থাকে পায়ে
চকিতে ফেরার পর মনে হয় খেলাগুলো আর নেই
ডাঙায় ফেলে রাখা নৌকা তারা
তাহলে কী বাকি আছে?
একটানা শব্দগুচ্ছ ক্ষয়াটে সাক্ষ্য দেয়
এইসব রাস্তা কি আমি চিনি?
বাড়ি তো সহজ উপমা
তবু চলন্ত ট্রেনে মাছি দেখলে
একধরণের কষ্ট হয়, চাক চিনে ফিরতে পারবে তো?
কেই বা পারে? এলোমেলো ধুলো ঝাড়তে গিয়ে
ফেরত যাওয়ার ব্যাগ তৈরি হয়ে যায়,
মাটি ও বীজহীনতা টানটান প্রস্তুত
এই ছিলার গায়ে ফেরা তো হলুদ কোনও সার্বজনিক ফুল
বিনীত সংঘাতে যাবে,
তার আগে ট্রেনে ঘুমন্ত মাথা লেখে
নেমে যেন বৃষ্টি হয়
১১
এইভাবে কবিতাগুলো প্রতিদিন সবুজ ডেলা হয়ে উঠতে চায়
প্রবল মেঘলা ভোরে নিভৃত বেড়াল এসে শুঁকে দেখবে
অথচ আমি তো শুকনো জঙ্গলের সামনে এখন
পাতায় পিছলে যায় রোদ রৌদ্র
কীটহীন ডালের অণ্বয়ে কোনও মাংসলতা নেই
আমাকে নতুন কোনও দেশ দেবে
এই উৎসবের নৈঃশব্দ্য?
শুষ্কতা কি নিঃশব্দ হয়?
ক্রমশ ধুলোর কাছে কর্কশ ব্যকরণ
হাতে পায়ে শুকনো কাটার দাগ
টুকরো রক্ত আমাকে কীকরে দেবে
সদ্য কলেজে যাওয়া মেয়েদের
চুলে খুশকি রোধক শ্যাম্পুর খোলামেলা ভাষা?
১২
পুরনো সজলতা আসলে পেপার ওয়েটে বন্দি গাছপালা
তীব্রভাবে ভেঙে ফেললেও তাদের স্পর্শ করা যায়না
ভাঙা কাচে মোড়া বিকেলগুলো পল্লবিত শিরায়
নতুন শহরে শীতল পাথর?
এখানে রাস্তাগুলো এলোমেলো হয়না কখনও
সামান্য স্খলনহেতু নিজে ছিন্ন হয়ে গেলে
রক্তাক্ত তালুর গায়ে বয়সের সন্ধি মুছে যায়
এ হাত কি চলন চায়?
চলমানতা কাকে বলব
ছোট দৃশ্যে আটকে থাকা গ্রীষ্মকালীন
সকালের খাঁ খাঁ পার্ক
নাকি স্পেস চিহ্নের গা বেয়ে
লেখায় চুঁইয়ে ঢোকা
শিখ তরুণের প্রভাতি চুল বাঁধা?
একে আকাট তায় গুছিয়ে কথা বলা আসে না । তবু এই লেখা পড়ে থাকতে পারলাম না । কিছু লিখতে ইচ্ছে করছে । ভয়ংকর লেখা । প্রথম বার পড়া -- অনেক স্মৃতি উসকে দিল । তোর বাড়িতে, ফোনে, এই এলিমেন্টগুলোর ব্যাপারে অনেক কথা শুনেইছি । ব্যাকগ্রাউন্ড-টা জানা তাই একটা চিত্রসিরিজ অনিচ্ছাসবত্তেও অনায়াস চলে আসে । বারুইপুর থেকে তোর দিল্লী আসা, এবং দিল্লীর পাড়ায় পাড়ায় বাড়ি বদলানো -- আবহ বদলানো -- কখনো তিব্বতী পাড়া, কখনো গালিবের গলি, কখনো ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের পাশের দৃশ্যাবলী । এবং সেই স্মৃতি নিয়ে পড়তে পড়তে -- সেই ফিল্টার থেকে একটা আত্মজীবনী বেস করে লেখা ন্যারেটিভ মনে হতে শুরু করল । তার পরের বার পড়লাম কষ্ট করে সেই স্মৃতি তাড়িয়ে আর মারহাব্বা ! একেই সাইকোলজিকাল গেম বলে ! একটা ন্যারেটিভের বিভ্রম রেখে ! তাকে অত্যন্ত সুক্ষ ভাবে ভেঙ্গে তার অণু দিয়ে নতুন ন্যারেটিভের সংকেত তৈরী করা বার বার ! তাও বিভ্রমটা সম্পূর্ণ বজায় রেখে ! এ কবিতা একজন সফল গদ্যকারের হাত ছাড়া সম্ভব নয় ।
ReplyDeleteভয়ংকর ।
স্যালুট, প্রণাম, কুর্ণিশ !
তবে "থকথকে জামরুল পাতা"র মোহ ত্যাগ কর ! বারুইপুরের গাছে গাছে পলিথিনে মোড়ানো জামরুল বড় অশ্লীল লাগে -- মনে হয় ... ঝুলছে !
স্যালুট আমারো। এই লেখার মুখোমুখি কিছু বলার থাকতে পারেনা। মনের মধ্যে, চিন্তার মধ্যে রেশ রয়ে যায়। বলার ইচ্ছে আসে অনেক পরে। শুভ্র সেই বিরল জাতের কবি যার নতুন লেখার মধ্যে কোনো আঁশ নেই। আমাদের, বাকিদের প্রত্যেকের মধ্যে সেই আঁশ থাকে। ত্বকে পৌঁছতে মাঝে মাঝে ছাড়িয়ে নিতে হয়।
ReplyDeleteআর এই প্রথম একটা আশ্চর্য কথা মনে হয়েছে - এই যে এই লেখার সঙ্গে "স্মৃতিলেখা"-র কোথায় যেন একটা রক্তের সম্পর্ক, ভাতৃ-সম্পর্ক। অর্ঘ্যর শেষ কবিতা পড়ে মনে হয়েছিলো। কিন্তু সেইটা স্বাভাবিক কেননা - অতীতের ক্ষণে ও স্থানে ফিরে যাবার একটা ব্যাপার ছিলো সেখানে। এখানে তো সেরকম কিছু নেই। আমার পড়ার ভুল হতে পারে।
পেপার-ওয়েটে বন্দী প্রাণ, বা নিষ্প্রাণের প্রতি আমার আকর্ষণ ছিলো বরাবরই; কিন্তু শিখ তরুণের প্রভাতি চুল বাঁধার মধ্যে রচনার বিন্যাসচর্চার রূপ - এই সব দেখা বাংলা কবিতায় প্রথম ঘটছে। যেমন "ব্লেড" - "ব্লেড" ও "মাংশ" (আগের পোস্টিঙে)-এর এমন অদ্ভুত অন্তঃসার চেরা ব্যবহার - এমন অদ্ভুত রূপক, যা বীভৎসতাকে নান্দনিকতায় পরিবর্তন করে - এ জিনিস দেখা যায় না।
আর বেশি কিছু না বলাই ভালো। আসুন আবার পড়া যাক।
যেদিকটা অদ্ভুত, তা হলো কবিতার ভাষাটি একধরণের বিভ্রম তৈরি করে - মনে হয়, এ যেন আবহমান বাংলা কাব্যভাষার থেকে একদমই দূরে নয়, দূরে যাবার চেষ্টাও যেন নেই, অথচ গতানুগতিক প্রতীকপ্রিয়তা খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না। ভাবনা পাওয়া যাচ্ছে, অবিক্ষিপ্ত, বুনে তোলা ভাবনা, কিন্তু সামনে বা পেছনে প্রবাহমান লিনিয়ার ভাবনা না। আরও পড়বো। অর্ঘ্য
ReplyDeleteAabaar porbo. sabtheke bhaalo laaglo "2" # angsher
ReplyDelete"tomaar haate kono bai nei
metro station-er faaNkaa bookshop-er gaaye
shudhu sankhya o kuhak cup"
faataafaati
---Nilabja
sobaike kritoggota janaai. aryanilda tomaar kathaay khub bhorsha pelaam. ami bolbo je ei lekhagulo smritilekhar bhaai, karon ekhane pichhone na fera thaakleo aachhe ekdhoroner Taan, jaake kono ingreji ba bangla shobde dhorte parbo naa, portuguese ra bole SAUDADE jaar artho holo Portugal ba Galicia te firte chaaoaar nostalgia... e holo sei rakom... banglaay feraar choraTaan, kintu taake ograjhyo kore chapiye dicchi notun dekhaa.blade mangsho sobi aachhe ei sob kaje
ReplyDeletesubhro
"banglaay feraar choraTaan,kintu taake ograjhyo kore chapiye dicchi notun dekhaa" ...
ReplyDeleteঠিক এই ব্যপারটা যে কত ভাবে অনুভব করেছি / করে চলেছি। যতই নিজেকে বিশ্ব-নাগরিক বলি, যতই নিজেকে বোঝাই এই "বাঙলার টান" আসলে এক অদৃশ্য অন্যপক্ষের চতুর ফন্দিবাজ খেলা, কোথায় যেন থেকে যায়। খুব ভালবাসি ভিনদেশী সংস্কৃতির মিলমিশ, কিন্তু পুরোপুরি মিশে যেতে আমি পারিনি কখনো, কারণ কাউকে পাইনি যে পুরোপুরি আমার সংস্কৃতির সাথে একই ভাবে মিশে যেতে চেয়েছে। তাহলে আমি কেন নিজের সব ছেড়ে দেবো? একটা অন্তর্নিহিত দোনমনা থেকে যায়, নতুন দেখা তার পরেও চাপিয়ে দিতে থাকি, নেশার মত। কারণ ওই নতুন দেখার চাহিদাটাও তো অন্তর্নিহিত।
অর্ঘ্য
sattachinho banan bhul!...
ReplyDeleteসেটা ঠিক। "সত্তা"-য় ব-ফলা থাকার কথা নয় ...
ReplyDeleteপ্রথমতঃ অসাধারন লাগল... সত্ত্বা বা সত্তা ,অর্থ কিন্তু একই মানে অস্তিত্ব ..তাই দুইই চলতে পারে বলে আমার ধারণা ।রাস্তাগুলো ভীষণ চেনা, রুক্ষ শুষ্ক ... ফিরে যাবার ব্যাগ সবসময় সাজানো থাকে কিন্তু ফেরাটাই হয়না...রক্ত চুইয়ে পড়ে অনুক্ষন এই ফিরতে না পারার ব্যথায়...দারুন একাত্মতা বোধ করছি শুভ্র...
ReplyDeleteসকলকে আবারও কৃতজ্ঞতা জানাই।
ReplyDelete@ সঞ্চিতাদি আস্তে আস্তে বোধহয় ওই ব্যাগটাই প্রতীক হয়ে যায় আমাদের বেঁচে থাকার। একটা তো সম্বল আছে! কিন্তু জানিনা কোথায় দাঁড়াবো, আদৌ পা ফেলার জায়গা থাকবে কিনা। আর এইভাবেই হয়ত গড়ে ওঠে মায়ামির Little Havana বা পারি-র Barrio Latino বা এই দিল্লির মিন্টো রোড বা চিত্তরঞ্জন পার্ক। পরের প্রজন্মে এসে ওই ব্যাগটা আর থাকেনা। "দেশ" বোধহয় একটা সময়খণ্ড হয়ে থাকে।
একবার বেরিয়ে গেলে কেউ কি ফিরতে পারে?
শুভ্র, সঞ্চিতা, খুব ঠিক কথা। ইতিহাসের সর্বস্থানে ও কালেই বোধহয় এটা ছিলো। পারীতেও একটা জায়গা আছে - লা পেতি জেরুসালেম। জুয়িশ টাউন। অই নামে একটা ভীষণ সুন্দর ছবিও আছে। স্থান আসলে কালখন্ড এটা আমার অনেকদিন থেকেই মনে হয়। বিশেষ করে বিদেশে থাকতে থাকতে। আবার সব জায়গাই প্রায় বিদেশ কোনো না কোনোভাবে। আরো মনে পড়ে গেলো কানাডার টরন্টোতে শহরের অনেকটা অংশই যেন টুকরো টুকরো বিদেশ দিয়ে গড়া। এমনটা কোথাও দেখা যায় না। এই ইতালিয়ান পাড়া, তার ওপাশে স্কটিশ টাউনশিপ, চিনেপট্টি, একটা লম্বা রাস্তায় কেবল ভারতীয়, পাকিস্তানী ও বাংলাদেশি দোকান, অন্যদিকে পোর্তুগীজ এলাকা, লাতিনো এলাকা। গোটা পৃথিবীর শহর যেন। যেমন নিউ ইয়র্ক। এই শতকের শেষে আমার ধারণা নিউ ইয়র্ক একটা আলাদা দেশ হয়ে যাবে সকল অর্থে। স্বপ্নের দেশ তো এইরকমই হওয়া উচিত। যেখানে ইম্যাজিন দেয়ারস নো কান্ট্রি, দ্য ব্রাদারহুড অফ ম্যান
ReplyDelete