Tuesday, September 13, 2011

নতুন শহর

এক

ঘরের কোণে পড়ে থাকা একটি কালো প্লাষ্টিক ব্যাগ
আমাকে গভীরতা শেখায়
ভিতরে পচতে থাকে প্রিয় - প্রিয় স্বাদ, প্রিয় বর্ণ
প্রতিফলন শুষে নেয় তবু
কালো ব্যাগ চকচক করে
নতুন শহরে ময়লা ফেলার দিন কবে?
আমি সোমবারের অভ্যস্ত হাতে গুটিয়ে
নিয়ে গিয়ে দেখি এখানে দিনরাত
ফেলা যায় অতীতের প্রয়োজন
কালো ব্যাগ গুটিয়ে যাচ্ছে
ভিতরের ধাতব ময়লা চাকা
কুঁকড়ে দিচ্ছে প্রিয় স্বাদ, প্রিয় বর্ণ
আমার উপলব্ধি হয় প্রিয়ের গুটিয়ে যাওয়া দেখাই
গভীরতার সঠিক পরিমাপ শেখায়

ভাবতে থাকি আমাদের শোকের রঙ কালো নয় কেন!
বা তীর চিহ্নের ব্যবহার শুরু কবে থেকে
শোকার্ত মানুষ কদিন ময়লা ফেলতে ভুলে যায়
এদের পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টায়
আমার খাতায় আসংখ্য তীর এঁকে শোকার্তকে দেখাই
ও জিজ্ঞেস করে তোমার খাতার উত্তর দিক কোনটা?
আমি উপলব্ধি করি শোক এক প্রতিবর্ত ক্রিয়া মাত্র
প্লাষ্টিক ব্যাগটি যে কোন রঙের হতে পারত
এখনো কিছু মানুষ দৃষ্টিনন্দন নিয়ে ভাবে, শোক নিয়ে ভাবে
আমি ভাবি প্রচলিত অভ্যাস
নতুন শহরে ময়লা ফেলার কোন নির্দিষ্ট দিন নেই
তবু সোমবারই কালো ব্যাগটির গুটিয়ে যাওয়া
দেখতে আমি তীর চিহ্নটি অনুসরণ করি
ময়লা ফেলতে বাকি সবাই দৃঢ় পায়ে আসে
-------------------------------------------------------------------------------

দুই

দূর শহর কখন আপন হয়ে ওঠে
কখন তুমি হাততালি দিতে শুরু কর – একসাথে,
ওদের সাথে যারা বারান্দায় ঝুলিয়ে রাখে গাছ আর মাটি
আর ফুল - চেনা রঙের, কিন্তু তুমি নাম জানো না
নতুন ওরা তোমায় শিখিয়ে নেবে ফুলের নাম
তুমি আপন হয়ে উঠবে, হাততালি দেবে
সময় দেওয়া বাগানে এককোণে দুলতে দুলতে
আমি তোমাকে হাততালি দেওয়া শেখাতে থাকি
প্রতীক্ষা - প্রতীক্ষা আর পর্যবেক্ষণ
হাততালি এক ব্যবহার
হাততালির ব্যবহার

নতুন শহরে বিমর্ষ মানুষেরা অন্যরকম
অথবা এখানে বিমর্ষ কেউ নেই
যারা হেঁটে যায় যন্ত্রে, অবলম্বনে
তারা হাঁটতে হাঁটতে কি ভাবে?
যন্ত্র, অবলম্বন, নাকি হেঁটে যেতে পারাটাই!
ওরা যদি আসলেই কিছু না ভাবে
তাহলে কেন তাকিয়ে দেখে না রাস্তার ধারে জানালার
গাঢ় বাদামী গোলাপগুলি মাঝে মাঝেই পাল্টে যায়
কিংবা ওরা দেখে
গোলাপের পাতার ভিতর দিয়ে একটা বড় পর্দা
জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে আছে

মুখের ভাব পরতে পারি না
চোখের ভাষা ও বিরক্তি সম্পর্কিত প্রবাদ বাক্যও
মনে রাখার জন্য আমি বিমর্ষ মানুষ
খুঁজতে বেরিয়ে দেখি নতুন শহরে
বিমর্ষ মানুষেরা অন্যরকম
বিমর্ষ হবার কারণ গুলোও অন্যরকম
আমি তোমায় বোঝাতে থাকি
হাততালি এক ব্যবহার
বিমর্ষ থেকে হাততালি কেবল ব্যবহারই করা যায়
-------------------------------------------------------------------------------

তিন

রেকাবের উপরে রাণী ঘুরছে টেবিল থেকে টেবিলে
আমি রাণীর মুখটা দেখছি মোটা কাঁচের অন্যদিকে
লোকটা আবার একটা নোট গোল করে রাখল গ্লাসে
ও কি জানত
বিলম্ব কখনও কখনও নির্ধারক ভূমিকা নেয়!

টেবিলের লোকগুলির রসিকতাবোধ নিয়ে ভাবি
সব নোটেরই অভ্যন্তরে মুড়িয়ে যাবার প্রবণতা থাকে
পিৎজার দোকানটিতে ছয়টি পাতা উলটে
এক অন্তর্গত উপলব্ধিতে বলে উঠি
পছন্দ বেশী থাকা ভালো নয়!
লোকটি দাঁড়িয়ে আছে
হয়ত আমার রসিকতাবোধ নিয়ে ভাবছে
রেকাবির উপর রাণীর দিকে তাকিয়ে বলি
এখানে সব পছন্দের ভিত্তির দশটাই তো উপাদান!

লোকটিকে দেখে বিরক্ত মানুষের বিষয়ে শেখা উপদেশগুলি
একটাও মনে করতে পারছি না
আরও কিছুটা সময় কিনতে চাইছি
আমি ষোল আর পঁচিশের পার্থক্য জানতে চাইলাম
ও রাণীর মুখটা আস্তে আস্তে ঘোরাচ্ছে
যে উপাদানগুলি চাই না মনে মনে তার একটা তালিকা তৈরী করে
আমি ওকে আটাত্তর নম্বরটা আনতে বলি
উপস্থাপনা ও রসিকতাবোধের মিথোজীবিতা নিয়ে ভাবা
রাণীর মাথায় কি মুকুট ছিল?

রাণীদের মাথায় মুকুট থাকাটা শুক্রবার সন্ধ্যার খবর হতে পারে না
কেউ মুখের দিকে তাকিয়ে ফরমাশ ভা্লোবাসে
কেউবা বাড়ির অভ্যাস ঝালিয়ে সম্মতি চায় উপাদানের
লোকটির এসব চেনা, তাই ও রেকাবে মনোনিবেশ করে
গ্লাসের ভিতর রাণীর মুখটা ঘুরিয়ে দেয় অজান্তে
আমার প্রশ্নের উত্তরে জানায়
মুকুট বিষয়ে ওর বিশেষ কিছু জানা নেই এখনো

ও মুখের দিকে তাকিয়ে আছে
আমি সময় কিনছি
বিলম্ব এখনও মাঝে মাঝে রোমাঞ্চকর হয়ে ওঠে
----------------------------------------------------------------------------------

চার

গাড়ী থেকে কুকুর নামিয়ে নিচ্ছে মালকিন – কুকুর মনে করছে সে পথ দেখাচ্ছে
মালকিন চলেছে ওই পথে যেদিকে তার বন্ধুরা এগিয়েছে
কুকুরটি মনে হয় আয়না দেখতে জানে
বারান্দায় আমি বাইরের তাপমাত্রা মাপছি
সব ফুল অচেনা ফলতঃ গ্রীষ্মের শেষ আজানাই থেকে যাচ্ছে!
এখন সময় বলে কিছু হয় না, তাই অসময়ও তার গুরুত্ব হারিয়েছে ব্যবহারহীনতায়
মালকিন বলার পিছনে আমার ভিতর কিছু মধ্যবিত্ত বোধ কাজ করে
বোঝাতে থাকি গাড়ী থেকে যারা নেমে আসে
তাদের কোন ক্লাস না থাকতেও পারে –
আমারও একটা গাড়ী রাখার জায়গা আছে
কি রঙ ভালোবাসো তুমি?
আমি গ্যারাজের ভিতর রঙের পরামর্শ চাই
লোকটি তাকিয়ে আছে – ও জানে হাসিমুখে থাকা কখন জরুরী
কিছু কিছু পুরুষ এখনও আয়না ভালোবাসে

আমি বারান্দায় অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে
ক্রমশঃ মধ্যবিত্ত বোধ কাটিয়ে উঠছি
একটা চেয়ার টেনে নিই – কিছু ফুলের নাম জেনে নিতে হবে
আমার কাছে এদেশের কোন গ্রীষ্ম নেই
তাই ফলের সাথে ঋতু মিলিয়ে দেখার প্রয়োজন বোধহীন থেকেছে
সমুদ্রের জল ঠাণ্ডা নয় এমন জায়গায় ছুটিতে যাই
কখনও ভাবি নি কুকুর পোষার কথা
স্টেশনের লোকটা কম্বলের উপরে কুকুর রেখে ভিক্ষা করে
কুকুরটা মনে হয় কোনদিন গাড়ী চাপে নি
ওর মধ্যে কি বিত্ত বোধ কাজ করে?
ও জানে মালিককে ও ভিক্ষা করতে সাহায্য করছে
মালিক কি জানে কুকুরের বিত্তবোধ?
মালিক বললে আমার ভিতর কোন বোধ কাজ করে না
একেই কি শূন্যতা বলে!
যদি কেউ ইচ্ছেমত ছুটি নিতে পারে তাহলে সে কতটা স্বাধীন?

আমার খুব জানতে ইচ্ছা করে কুকুর শূন্যতা বোধ করলে সে কি করে
যদি তার মালিকও শূন্যতায় ঢুকতে চায়
তাহলে কি ওদের বন্ধন দৃঢ় হয়!
বন্ধনের একক কি?
মালকিন বন্ধন ছাড়লে কুকুর ভাবে পথ দেখাচ্ছে
অথচ ওদের কারও চোখেই শূন্যতা নেই

আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে
শূন্যতা বিষয়ে অভিজ্ঞ হয়ে উঠি
নীচের দিকে তাকিয়ে

5 comments:

  1. শ্বাসরুদ্ধকর।

    পলিথিন ব্যাগ (নাগরিকতা) থেকে শুরু করে, তার সাথে একে একে তীরচিহ্ন অংকন (মনে হলো মানুষের সভ্যতার বিকাশের শুরুর পর্যায়), অথচ হাততালির মত সহজাত একটা ব্যাপার শেখানো, হাঁটার সাথে যন্ত্রের কন্ট্রাস্ট, বিমর্ষ লোকের টেবিলে উপগত রাণী (এ অংশটার জৈবিক ছন্দ টের পাওয়া যায় কবিতায়), শেষ পর্যন্ত বিত্ত ধারণা, সবকিছু চলতে চলতে বার বার একধরণের অ্যাবসার্ডিটি চলে আসে

    খুব গহীনে চলমান এক নদীকে ধরার চেষ্টা। জৈবিক মানুষ, সামাজিক মানুষ, বৈজ্ঞানিক মানুষ - এর মধ্যে এক ইন্টার-রিলেশান খোঁজা

    ReplyDelete
  2. কিছুকিছু জায়গায় কিছুটা 'ইলাবোরেটিভ' বা জার্নালিস্টিক হবার প্রবণতা আছে যা উড়ন্ত পাঠক আমাকে সেসব সময় মাটিতে নিয়ে এসেছে। তবে স্বীকার করি এটা কবির সচেতন প্রয়াস-ও হতে পারে।

    ReplyDelete
  3. Sukanto, bhaalo laagchhe... kintu ekTaa ashonkaa JeTaa aage jaaniyechhilaam... that something is missing... ei JaaygaaTaa gato kichhudin poRte poRte pin point korte paarlaam... Raad-er aalochonaa-o help korlo... Elaborative hote chaawaa... explanatory hote chaawaa... fole kabitaar ekTaa swabhabik charm Je Jaaygaa theke aase--Je-- ekhono kichhu dhoraa baaki theke gelo...Je-- there is something else to it....ei JaaygaaTaa aaschhe naa...boDDo beshi pUrNotaa-r dike Jaachche...

    aami aboshya kabitaa poRte jaani naa...eTaa khub kNaachaa reading hote paare... aamaar kathaay kaan dis naa... let others say....

    ReplyDelete
  4. Raad o Sabyada, dui jona kei thanks.

    apnara dui jonei kobita gulir mul durbolata ta dhorte perechen bolei aamaro mone hocche. han, kobita gulir beshir bhag jaiga tei khub elaborative hoye gache. tar moddhe kichu eseche intentionally, ar baki ta aamar barthotha.

    aasole aami chaichilam ek ekta ghotona ke kendro kore kichu gore tulte, fole aamar ei kobita gulir bistar beshi nei hoyto, orthath er prekkhapot choto - fole hocche ki bishoy ta elaborative hoye jacche. aami obosshyo ei sob kobitay eto kotha bolar por o kichu na bola kotha rakhte cheyechilam - kintu ekhon mone hocche kaj tay aami sofol hote pari ni ekhono porjonto. dekhi chesta chailiea.

    ReplyDelete
  5. "ওরা যদি আসলেই কিছু না ভাবে
    তাহলে কেন তাকিয়ে দেখে না রাস্তার ধারে জানালার
    গাঢ় বাদামী গোলাপগুলি মাঝে মাঝেই পাল্টে যায়
    কিংবা ওরা দেখে
    গোলাপের পাতার ভিতর দিয়ে একটা বড় পর্দা
    জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে আছে "

    -- কবিতাটিতে অন্য কথাগুলো এই কথাগুলোর সাপেক্ষে অনেক বেশি "ব্লার"। যেন ইচ্ছা করেই এমনটা লেখা হয়েছে। যাতে এই কথাগুলোর ভিতর দিয়ে একটা জুম-ইন ইফেক্ট চলে আসে। একটা ১০ পাতার ডকুমেন্ট "প্রিন্ট প্রিভিউতে" দেখার সময় যেকোনো একটা পাতায় ক্লিক করলে যেমন লাগে ...

    ReplyDelete