Wednesday, July 30, 2014

কিছু টুকরো লেখা - ২

আমি যেটা ভাবছিলামঃ  

অনেক দিন আগে কোন এক বিজ্ঞানীর পড়েছিলাম যে, যাঁরা বিজ্ঞান নিয়ে লেখেন তাঁরা নাকি অনেক পরিশ্রম করে সহজ ভাষায় বা সহজ ভাবে লেখেন যাতে করে পাঠককে বেশী কষ্ট করতে না হয়। তার কারণ হিসাবে তিনি বলেছিলেন, বিজ্ঞানী স্বভাবতঃ জটিল বিষয় নিয়ে লেখেন, আর তখন তাঁরা পাঠকের দৃষ্টি চান মূল বিষয়ের প্রতি - ভাষা উদ্ধার করতে গিয়ে পাঠক এনার্জি হারিয়ে ফেলুক সেটা তাঁরা চান না। সেই লেখায় তিনি যুক্তি দিয়েছেন যে, যেহেতু সাহিত্য বিষয়টাই তত জটিল নয়, তাই অনেকে কৃত্রিম জটিলতা সৃষ্টি করে। 

আমি এই ক্ষেত্রে চেষ্টা করছিলাম যে কোন জটিল ভাষা বা কোন জটিল উপমা, ব্যঞ্জনা ব্যবহার না করে কিভাবে ফুল, পাখি, প্রেম এর বাইরে আমি যে ভাবে আমার চারিদিক দেখি, সেটা কি ভাবে প্রকাশ করা যায়। হ্যাঁ, এর জন্য একটু বেশী পরিশ্রম তো করতে হয়েছেই - তবে সেটা সার্থক হয়েছে কিনা একমাত্র পাঠকই বলতে পারবে!

আমি লেখার পর দেখলাম, আমার কবিতায় বেশ কিছু বার 'পাখি' চলে এসেছে। তো সেই নিয়ে এক পাঠক জানালেন, 

"‘পাখি সবসময় ক্লিশে নয়, কমল চক্রবর্তীর একটি কবিতায় সমসাময়িক আর্বান হয়ে ওঠে কিভাবে -

দু একটা পাখি ডাকছে
ডাকো পাখি।
আজ তেলকলে মাইনের দিন।
রঙিন জিলিপি ঠুকরে উড়ে যেতে পারো
আর দেখো, কিভাবে মেয়েরা সাজছে !
পাখি বসবে কানের ঝুমকোয়, যেন দাঁড়
যেন মাইনে নয়, পাখিই ডেকেছে অনুরাগে।"

কবিতার পাঠক তা হলে আজও আছে - এখানে ওখানে, কখনও অপ্রত্যাশিত! 


২৮।
কেউ পাখী হতে চায়, কেউবা উড়তে
কেউবা উদাস হয়ে দেখতে ভালোবাসে
কিভাবে গাঢ় আঁধার
একাকী করে দেয় প্রিয়জনদের
অথচ
পাখীরাও ঘরে ফেরে দল বেঁধে
সন্ধ্যা ঘনালে


২৯।
কথা না বললেই ভালো হয়
এই অবিরাম ভাব বিনিময়
কষ্ট দেয়
স্বরপ্রেক্ষণ শুধু হোক প্রয়োজনীয়তার
আর পাগলের
আর প্রত্যাশাবিহীনের

৩০।
তাকে সবাই প্রহেলীকা বলত
ছুঁতে চাওয়ার গল্প শুনতে শুনতে
ক্লান্ত হয়নি কি সে?
কোথায় ছুঁতে চাওয়া হত
জানতে পারলে সে হয়ত
আর প্রহেলীকা থাকত না!

৩০।
প্রতিনিয়তই এক গল্প তৈরী হয়
পাখিরা বাসা বাঁধে
আমার ঘরের কোণে
উড়ে আসে উড়ে যায়
যারা প্রতীক্ষায় থাকে তাদের শব্দ পাই
মিলন শেষে সেই শব্দও ফুরিয়ে যায়
নৈঃশব্দের গল্প কখনও মধুর
আবার অপেক্ষারও

৩১।
আমি এয়ারহোষ্টেসকে জল চাই
মধুর হেসে সে পিছন ফেরে
দেখতে থাকি সেই ফিরে যাওয়া
ওর আসার থেকে ফিরে যাওয়া
দেখতে বেশী ভালোলাগে
পিছন ফিরলে পরে
ভ্রুকুঞ্চন অপ্রাসঙ্গিক

৩২।
আমার বাগানে কাজ করে যে লোকটা
সে তিনমাস পর বাড়িতে ফোন করবে আবার
এর মাঝে আমি
বেশ কিছুজনকে জন্মদিনের শুভেচ্ছে জানাব
দেশের অবক্ষয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ
দলবদলের খবর, নতুন যুগের সাহিত্য
এই তিনমাস ওর বাড়ির লোকেরা ওর কথা ভাববে।

৩৩।
তার একটা প্রেম ভেঙে গিয়েছিল
সে একটা এনগেজমেন্ট ভেঙে দেয়
বিয়ের নিমন্ত্রণ পত্র পেয়ে
জানতে চাইলাম কতদিন সে মেয়েটিকে ভালোবাসে?
বলল নাকি অনন্তকাল
আমি খুশী হলাম
সময়কে নিয়ে ওরা খেলতে শিখে গেছে!

৩৪।
বেড়াতে যাবার পরিকল্পনাই ভালো বরং
মানুষ চিনতে চিনতেই ছুটি ফুরাবে
অসম্পূর্ণ ধারণা নিয়ে ফেরা আমরা
কতকগুলি নাম ক্রমাগত ধর্ষণ করতে থাকব
আরো অনেকে যোগ দেবে
কে বেশী আনন্দ পেয়েছে তার প্রতিযোগীতায়
কেউ বলবে সকালটাই ভালো সময়
কারো মতে সূর্য ডোবার পর
পৈশাচিক আনন্দে চোখ মুখ ঝলমল
কোণে বসে থাকা নিশ্চুপ কেউ
পরেরটায় সবার একসাথে অংশগ্রহণের কথা
খুব সতর্পণে ভাববে
বেড়াতে না যাওয়াই ভালো বরং।


৩৫।
যে ভালো গান গায় সেই সাধারণত হয় মধ্যমণি
যে গান বোঝে না সেও
মধ্যমণি দেখে বুঝে যাবে ভালো গানের প্রয়োজনীয়তা
মাথা নাড়তে থাকবে
অপেক্ষা করবে বাকিরা কখন তালি দেয়
ভারতীয় সংগীতে মাঝখানেও বাহবা বলা যায়
মধ্যমণির সাথে চোখাচোখি
কাজ শেষে এবার বাড়ি ফেরার পালা

৩৬।
তুলনামূলক ব্যাপারটি খুব জটিল
সেই ভাবাবেগে আমরা করে খাই
কষ্ট পাই সে কতটা এগিয়ে গেছে দেখে
নিজেকে তৈরী করতে থাকি
আরো কষ্ট পাব বলে
সেই ফাঁকে বাকিরাও এগিয়ে যায়
আমি তুলনামূলক স্থির
বোঝাতে থাকি স্থিরতা স্থায়িত্ব আনে
কেউ হাসে, কারো উপেক্ষা
ভাবাবেগ ব্যাপারটাই তুলনামূলক

৩৭।
এখানে কোলাহল নেই
এখানে তাই রাত একমাত্রিক
সন্ধ্যা নামলে কেবল অন্ধকারই নেমে আসে
রাত পাহারাদার সাইকেলে বের হয়
উত্তেজনা বিহীন টহল
পানসে করে কি তাদের?
আমি হলে কিছু ঘটাতে চাইতাম
চাইতাম কিছু ঘটনা।


No comments:

Post a Comment