ইদানিং কিছু লেখার চেষ্টা করছিলাম - তুলে দিলাম এখানে
১।
সাদা বকেদের ভিতর
দিয়ে হেঁটে যাই
বকের সাথে চেনাশুনা
নেই মানুষের
তবুও কারো কারো
গায়ের গন্ধে সরে না ওরা
জানি না ফেরার সময়
হয়ে এলে
ঠিক কতখানি ক্লান্ত
হওয়া প্রয়োজন
তোমরা কি ফিরে যাবে
না?
তুমি তবে ঘাসে এসো, এখানে শিশির নেই
এখানে নেই অপেক্ষা
আমি ফিরে যাব লাল
রঙ পিছু ফেলে
ক্রমশঃ ধূসর হয়ে
আসবে চারিদিক
সাদা বকের ভিতর
ক্লান্ত মানুষ, তৃপ্ত মানুষ
গায়ের গন্ধ ঠিক
চিনে নেবে ওরা
২।
পুরো দিন কাটিয়ে
সন্ধ্যা বেলায় হতাশ লাগে
আরো একটা দিন কাটিয়ে
দিলাম
আমার নকল ফুলে ধুলো
জমে যায়
আমি কাল করবো বলে
আরও একটা দিন কাটিয়ে দিই
৩।
তুমি ফল ভালোবাসলেও
এখানে সঠিক ফল পাওয়া যায় না
সবুজ গাছ মানেই
সঠিক ফল নয়
ফল আসে নদীর ওপার
হতে
ওপারের জমি উর্বর
কিংবা ওরা ভালোবাসতে
জানে
৪।
সিনেমায় যাবার পরিকল্পনা
করি রোজ
যাওয়া আর হয় না
কারণ গল্পটা আমার
জানা
কারণ গল্পটা আমি
বুঝে ফেলব শুরুর পরেই
কারণ --------
কৃত্রিমতা আর আনন্দ
দেয় না
৫।
তুমি না থাকলে আমি
প্রায়শঃই খাবার কিনে খাই
অথচ তুমি কেবল রাঁধার
জন্য ছিলে না
তুমি থাকলে দুজন
একসাথে বেরোই
খেয়ে ফিরি
তুমি না থাকলেই
কেবল
কেনা খাবার প্রয়োজনীয়
হয়ে ওঠে
৬।
কাল একটা টব কেনার
কথা ছিল
বিকেলের বাজার থেকে
এদিকে বৃষ্টি এল
জোর
মেঘের আড়ালে ঢেকে
গেল আমার ফুলগাছ
শিকড় বেয়ে গড়িয়ে
গেল জল
টবটা থাকলে গাছটা
আরো একটু বিশুদ্ধ জল পেত
বিকেলের বাজার কি
তাহলে বিশুদ্ধতার প্রতীক?
৭।
তুমি ভগবানে বিশ্বাস
করে রবীন্দ্রসংগীত গাও
আমি বিশ্বাস করি
না
তবুও সংগীত আমাকে
ছুঁয়ে যায়
তাহলে আমার অভাব
কিসের?
৮।
গাড়ি চালাতে চালাতে
যদি নদীর কথা ভাবো
তাহলে দেখবে ক্লান্তি
দূর হয়ে যাবে
তবে দামোদরের কথা
ভেবো না তা বলে
যদিও আটাত্তরেই
আমার জন্ম
৯।
উনুন জ্বালানোর
পর
খাবার সুস্বাদু
হবার সম্ভাবনায়
বিশ্বাসহীনতায় ভুগতে
ইচ্ছে করে
সে তুমি যতই রেসিপি
লিখে রাখ
১০।
প্রখর রোদের পর
আরো একদিন প্রখরতর
রোদ
অভ্যাস হয়ে যায়
দিনের কাজ রাতের
দিকে ঠেলে দিই
রাতের কাজ দুপুরে
সবাই কি এই ভালোবাসে?
১১।
ব্যক্তির চিঠি আসে
না আজকাল
খাম দেখে উত্তেজনা
জাগে না
ভিতরে কি আছে জানা
হয়ে গেলে
অযত্নে খুললেও চলে
চিঠির তো আর প্রকাশ্য
অভিমান নেই!
১২।
আড়ি দেবার চল এখন
উঠে গেছে
তবুও তো একবার ছোঁয়া
যেত!
১৩।
একই পথে যেতে বার
বার
ভালো লাগে না
নতুন পথ খুঁজতে
গিয়ে দেখি
সে পথেও গেছি পুনর্বার
তাই ভাবি প্রতিবার
ডুবন্ত সূর্যের
দিকের পথটা কেমন?
১৪।
অভিমানী কিশোরী
নিয়ে কিছু লিখব না ঠিক করেছি
এই নয় যে আমি কিশোরী
দেখেনি
এও নয় যে অন্য কবি
লিখে দিয়েছে
কারণ অভিমানী শব্দটাই
আপেক্ষিক
যেমনই আপেক্ষিক
কিশোরীও
এর চেয়ে তরুণীদের
নিয়ে লেখা সহজ
অন্তত স্তন সংক্রান্ত
ভাবনার জন্য
অবচেতন পাপবোধ জাগবে
না।
১৫।
সপ্রতিভ হতে চাইবার
কার্যকারীতা নিয়ে ভাবি
আমি লাজুকতার অভাব
বোধ করব
নাকি করুণাঘন দৃষ্টির?
অন্ধদের শুধু এই
কারণেই ঈর্ষা হয়।
১৬।
জানি তার পরেও
বলবে তুমি
বোঝ নাই
এ হেন হেঁটে
যাওয়া, চেয়ে থাকা
বাগানের ভিতর
ঢুকে বাগান
খুঁজতে খুঁজতে
কখনো বলবে ক্লান্ত
গাছ শুনতে পাবে
না তোমার কথা
বলবে না গায়ে
পড়ে
সবুজ ভালোবাসো
তুমি যাতনা
শব্দটি ব্যবহার করবে
আমি অবাক হয়ে
ভেবে দেখব
কিছু জিনিস
অজানা থাকলে
এখনো বিষ্মিত
হওয়া যায়
গাছেরও প্রাণ
আছে
না জানলেও আমি
বাগানের ভিতরে
ঢুকে
বাগান ---
১৭।
হিসাব মেলানো
ভালো
পাটিগণিতের
অভ্যাস থেকে যাবে
বন্ধুরা সবাই মোটামুটি
অঙ্ক জানে
বুঝতে পারবে
গর্ব হবে
এতো বছর চোখের
আড়ালে থেকেও
কেউ পাটিগণিত
ভুলে নি
১৮।
গান গাইবার
জন্য গানের গলা জরুরী নয়
যদি না তুমি
লেজেন্ড হও
বা
যদি তুমি
লেজেন্ড হও
তোমার গানের
গলা ধরে রাখি
আমার
সান্ধ্যভ্রমণে
কর্কশ পাখিরাও
ঘরে ফিরে যায়
নিজেদের মধ্যে
গল্পগুজব করতে করতে।
১৯।
জানি না ঘরের
দরজা খুলে রাখলে
হৃদয় কতটা
প্রসারিত হয়
বললাম তুমি
বারান্দায় যাও
দেখি স্পন্দন
শুনতে পাই কিনা
এখানে গাড়ির
হর্ণ নেই
এখানে টিনের
চালে বৃষ্টির শব্দ
মুছিয়ে দেয়
দূরত্ব
স্পন্দন শোনা
যায়
ঘরের দরজা
খানিক বন্ধ রাখো এবার
শব্দটা ধরে
রাখি
২০।
বলেছিলো এভাবেও
ফিরে আসা যায়
আমি তাই দেখছি
লিপষ্টিকের
খোলস ছাড়িয়ে
ফাটা ঠোঁটের
উপকথা ছড়িয়ে
কেউ সোজা হেঁটে
এসে
আমার ভিতর দিয়ে
চলে গেল
আয়নায় নিজেকে
দেখি
রক্তপাত হচ্ছে
না!
পিছন ঘুরে দেখি
চন্দনের সুবাস
পড়ে আছে
কোন রোমান্টিক
গল্প চাইছি না
কেবল ভাবছি কেউ
আসুক সোজা
একদম সোজা
একটু রক্তপাত
আয়না কেনাটাও
সার্থক হোক ।
২১।
সামনে কোন সবুজ নেই
তাই হৃদয়ের কথা ভাবি
সমুদ্র হতে উঠে আসা মাছের কথাও মনে পড়ে
বালিতে শুয়ে মৃত, স্থির এখন
আমি পেরিয়ে যাই কটু গন্ধ
নোনতা বাতাস আগাম জানায়
মৃত মাছ আর তাদের শুয়ে থাকা
বিকেল পেরিয়ে গেলে কে আর তাকাতে চায়?
আঁধার হলে সবুজ হারায় তার নিজস্বতা
আরো অনেক কিছুর মতই -
তখন মাছেদের নিয়ে পুষ্টির কথা ভাবি
সমুদ্র এক অভ্যাস হয়ে গেছে
সূর্যের ডুবে যাওয়া দেখে ঘরে ফেরাও -
আমি কটু গন্ধকে বলি
নোনতা বাতাসকে জানাই
মৃত মাছকে শোনাতে চাই
ঘরে ফেরাটাও এক অভ্যাস
ফিরব বলেই সন্ধ্যা এত সুন্দর লাগে
নিঃসঙ্গতা আর সবুজ দুই জরুরী
কেবল নিঃসঙ্গ থাকলেই
সবুজের কথা নিয়ম করে ভাবতে হয়।
২২।
ঘাসেরাও মরে গেছে প্রায়
এই উত্তাপে
আমি ঠান্ডা ঘর থেকে দেখি
কাঁচের গায়ে লেগেছে জলকণা
ওই জল পেলে ঘাসেরা
আরো সবুজ হত হয়ত
২৩।
অনন্ত অবসর যারা চায়
তারে জানে না অনন্ত কি
তেমন অবসরে বিকেলে হাঁটতে নেই
ভাবতে নেই ছিঁড়ে ফেলা চিঠির কথা
আকাশের কথা ভাবতে হয়
ধোঁয়াশা ছাড়িয়ে নক্ষত্র খচিত
রাতই অনন্ত
এবং অবসর
২৪।
ওরা নাকি ঠিকানা জানে
নির্দেশ মত পৌঁছে দেবে ঠিক
গন্তব্য এসে যাবে সময় মতই
ঠিকানা আর গন্তব্য কি সমর্থক?
ঠিকানাহীন সুখী থাকে কিছু লোক
গন্তব্যহীনতায় ভোগে কেউ কেউ
সমস্ত রোমান্টিক ভাবনা সেরে
একসময় সবাই ফিরতে চেয়েছিল
২৫।
আমি ভিখারী দেখি নি অনেকদিন
নিয়মিত না দেখলে
চিনে নেবার অভ্যাস নষ্ট হয়ে যায়
হাত বাড়ালেই কেউ ভিক্ষুক হয় না
প্রকৃত ভিখারী তো নয়ই!
২৬।
চিঠি লেখার মধ্যে একটা ব্যাপার ছিল
ওরা বলে
অপেক্ষায় থাকতে ভালোলাগত
উত্তরের
আর কেউ যদি উত্তরের আশা না রাখে!
সেই প্রসঙ্গে ওরা নিরুত্তর
চিঠি লেখার মধ্যে একটা ব্যাপার ছিল
কারো হাতের ছোঁয়া লেগে থাকে যেন
আমি নিরুত্তর থাকি
২৭।
আমি অজানা পাখী দেখি আজকাল
খুব কাছাকাছি আসে
তার বাদামী ঠোঁট
দেহের পেলব মেদুর রঙ
আমাকে চেনা পাখির কথা ভাবায়
আমি এগিয়ে দিই তার দিকে খুব চেনা কিছু
পাখির চোখ হাসে
সব পাখিই আদর নিতে চোখ বুজিয়ে নেয়।
চমৎকার লেখা হচ্ছে সুকান্ত। কতদিন পর তোর কবিতা পড়ছি। এটা যে দিনলিপি নয় - এইটা বুঝতে দিলে আরো ভালো হয়। ৪ এবং ৫ নম্বর অংশকে আরেকটু বিমূর্ত করে তোলা যায়, এতটা ডাইরেক্ট না করে। একটু rework দরকার। কিন্তু সব মিলিয়ে দারুণ লেখার দিকে। আমাদের ভেজা দেশলাই যে এতদিনে শুকিয়ে গেছে সেটা নীলাব্জ জানিয়ে দিয়ে গেলো। দেখো এখন জনে জনে কাঠি জ্বালিয়ে ফেলছে।
ReplyDeleteআর্যনীলদা, রি-ওয়ার্ক বিষয়ে একমত। কিছু কিছু অংশ নিয়ে আবার বসতে হবে। আর দিন লিপি নয় ব্যাপারটা না বুঝতে দেবার জন্য মনে হয় লেখা গুলোর ক্রম পরিবর্তন করা দরকার। আর তার সাথে 'আমি' বা 'আমার' প্রয়োগ কমানো বা এতটা ডাইরেক্ট করে না বলা।
ReplyDelete