Saturday, February 18, 2012

ফালতু চিন্তা

ছটফটে কুকুরের থেকে শিকলকে নিষ্কৃতি দিতে দিতে
স্পর্শের কথা ভাব, তার পরিসীমার কথা
ভুলে যাও—শেকল একটা অস্বচ্ছ ধারণা মাত্র
যে কুকুরের কাছে চিরকাল স্বচ্ছ থাকতে চেয়েছে
--
বড়জোর অনুপস্থিতি
অদৃশ্য হয়ে উঠবে না কেউ
একধরণের পতন সর্বত্র, সবজায়গায়
নিহিত—এটা জানার পরও
পতনশব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায়
আর অনুনয়, শুধু অনুনয় আমাদের ধরে ফেলে
প্রতিধ্বনির মধ্যে ডুবিয়ে দেয় নিজেকে
স্তব্ধতার মধ্যে
--
সংঘর্ষের আগে যে আবহাওয়া গ্রহণযোগ্য ছিল
যথেষ্ট নিরাপদ ছিল আমাদের একা থাকার
অভিযোগ ও ইচ্ছেরা
আর উৎসকে অস্বীকার করে
রঙ বদলে ফেলা আলো
নেমে যাচ্ছিল

এভাবেই আমাদের নেমে আসা

শেকলের কাছে ঋণী থাকার স্পৃহায় ঘেমে ওঠা ঘাড়

বাতাসের দৃশ্যমানতার কথা ভেবে দেখার

সময় ছিল না ।
--
দৃষ্টি বলতেই
অদৃষ্টের কথা মনে পড়ে
কপালের কথা
ঠিক মাঝখানে
কালো ও নিখুঁত ফুটো
ছোট ক্যালিবার
পিস্তলচ্যুত

খুনী ফিরে গেছে অনেকক্ষণ

এখন পরিস্থিতি ফিরছে
--
জড়তা যদি একটা পরিস্থিতি হয়
তবে অনস্বীকার্য
হয়ে ওঠে তার প্রবাহমানতার দাবী

ওফ ! এই মহিমাময় জীবন
ওফ ! আমাদের সীমাবদ্ধতা
--
--
কিছুটা তো রহন সহন
কিছুটাকে নিভৃতিতে পায়
হাত থেকে খসে পড়ে কাঁসার গেলাস
কোথাও শব্দ বাজে
কোথাও বাজে না

আশংকার সাথে দেখা হয়
কুশল বিনিময়
হাত নেড়ে যে যার মতন
ঢুকে পড়ি ব্যঞ্জনার মধ্যে
অনুভূতির মধ্যে

--
বিছানায় কারা জেগে আছে
জেগে আছে মোদ্দা কথারা
শান্ত একটা ঘুম প্রতীক্ষা করে
প্রতীয়মান হয়ে ওঠার কথা ভাবে

শেকল বাইরেই রয়ে গেছে
ভয় হয়—যদি বরফ পড়ে
যদি চোর আসে
অন্যধরণের পায়ে
হাল্কা শীত শীত করে

বিশ্বাস ছাড়া কেউ জেগে থাকে না ।
--
বিশ্বাস যদি স্থির হয়
তবে জড়তাও একধরণের বিশ্বাস
এইসব আলোচনা হয় শেকলের সাথে
সামোভারে হুইশল বাজে
ভাপ ওড়ে
কিছুটা আমাকে ঢাকে
কিছুটা শেকল
অন্তরীণ উপকথাগুলি
চকচক করে
--

14 comments:

  1. জানিনা কজন এই কবিতা পড়ছেন। যারা পড়ছেন, বাংলাভাষার এই কবিতা, বিলিভ মি, সারা পৃথিবীর কবিতা আমি পড়ছি আজ অন্তত ৩০ বছর, - এই জিনিস বাংলা ভাষায় খুব একটা বেশি কেন - সোজাসুজি বলি - একটাও লেখা হয়নি। কোনো তর্কে যেতে চাইনা। কবিতা তর্ক করে বোঝানোর জিনিস নয়, বুঝলে ভালো, না বুঝলে স্রেফ আমার কথা শুনুন, জিজ্ঞেস করুন, আর সন্দেহ থাকলে এই ব্লগে আর না-আসাই ভালো।

    শেষমেশ বলবো "খুনীর" ফিরে যাবার কথা, "দৃষ্টির" পরেই "অদৃষ্টের" কথা - এইসব দ্রষ্টব্যের ধারাবাহিকতার বাইরেও যেতে হবে - এই কবিতার কবির কাছেই এমন দাবী করা যায়।

    সম্পর্ক-অসম্পর্ক, association-disassociation কে কেন্দ্র করে একটা উপরিতল টান কবিতাকে বিছিয়ে রেখেছে আমাদের সামনে, খানিকটা জোর করে। কবিতা এবরোখেবড়ো হয়ে যেতে চাইছে তবু। ওঠা যাচ্ছে, পড়া যাচ্ছে, সব হয়তো বোঝা যাচ্ছেনা, কিন্তু একটু ধৈর্য ধরলে সব বোঝা যাবে। ঠিক।

    ReplyDelete
  2. Asadharon, sotti ...Arya sotti ki kobita bojhano jai, janina , kobita ke bhalo na basle tar antornihito artho ki bujhie dewa jai ! Tumi hoito ekbhabe bojhale onyer kache sei kobitai hoito onyo ortho bohon kore, janina eta ekanto amar dharona, please kichhu mone koro na, tai ami tomar oi kothar songe sohomot "kobita torko kore bojhanor jinish noi"... Adristo, sei futo kopal tader...shanto ekta ghum aar protekkha kore thake na ei lekha porar pore.. Sabya apnar arro bhabnar opekkhay thaklam...

    ReplyDelete
  3. পরিসীমা, শৃঙ্খল - এর কতোটা আমরা ঠিক বুঝি, কতোটা লঙ্ঘ্যনীয় কতোটা অলঙ্ঘ্য - এই সমস্ত প্রশ্নের ধোঁয়া থেকে যাত্রা শুরু হচ্ছে। ধোঁয়া বা কুয়াশা কিভাবে আমরা পেরবো এর উত্তর আমাদের নিজস্ব। সেই হেতু পথও নিজস্ব। বিশ্বাস, জড়তা, শেকল, সীমা, স্থিরতা, পরিস্থিতি - সবই সেই স্থায়িত্বের দিকে ইঙ্গিত করতে থাকে যেখান থেকে সারমেয়বেশী মুক্তিকামিতা পলাতকপ্রবণ যেমন, একটা স্বচ্ছতার ধারণার থেকেও কি পলায়নপ্রবণ ? যেটা বাধা, যেটা নিয়ন্ত্রক সেটা কি অনড়, স্পষ্ট ? না তারো নিজস্ব গতিবিধি ও আপেক্ষিকতা রয়েছে?

    এক দেরিদীয় বিগঠনভাবনা এই কবিতার মধ্যে মোক্ষমরূপে সক্ষম। অনুপস্থিতিকে সহন করা, মেনে নেওয়া ঘুম যা "পাতনিক" - সেও পতনশব্দে ভেঙে যাচ্ছে। যে বিশ্বাস স্পষ্ট বা অস্পষ্ট, লঙ্ঘ্য বা দুর্লঙ্ঘ্য তাকে ছাড়াও কেউ জেগে থাকে না। নিদ্রা ও জাগরণের মধ্যে বারবার সম্পর্ক ও বিসম্পর্ক গড়ে ওঠা ও ভেঙে যাওয়া - সঙ্গমকালীন যাতায়াতের মতো the to & fro thought-motif - অত্যন্ত জটিল এক চিন্তাপ্রবাহকে কতো সহজে পেশ করা হচ্ছে - এমন উদাহরণ বাংলা কবিতায় খুব বেশি আছে বলে মনে হয়নি।

    একটা দারুণ রঙদার মনোলোভা দৃশ্য দেখে, প্রেমিক বা প্রেমিকার আলগা স্পর্শ পেয়ে, পাহাড়ের পেছনে ভেসে ওঠা সোনার বেলুন দেখে, পাখির শব্দ বা ডাক শুনে একরকম কবিতা লেখা হয়। সেখানে যেহেতু ব্যক্তিগত অনুভূতির সত্য ছাড়া আর বিশেষ কিছুই বলার জায়গা নেই - অস্পষ্টতা তৈরি করতেও যে কবিতার কালঘাম ছুটে যায়, সেই ধরণের কবিতা ব্যকরণ, ভাষা, শব্দবিজ্ঞান - সেম্যান্টিক, সেমিওটিক্সের দফারফা করে নতুনত্ব খোঁজে।

    সব্যসাচীর তথা এই ব্লগের অধিকাংশ কবিতার ভাষার জায়গাটা সোজা সরল। রূপক বোনার কলাকুশল জলবৎতরল। কেননা তার বলার কথার আড় ও গভীরতা, তার চিন্তার ঘনত্ব এতটা যে ওই সমস্ত উপরোক্ত পেশীসঞ্চালন তার না করলেও চলে।

    শুধু তাই নয়, করলে বিপদও হয়। কবিতার রূপ যায়, গুণও।

    ReplyDelete
  4. আর্যনীলদা,

    কী বলব ! অন্য কেউ এইভাবে বললে হাইপারবোল ভাবতাম--অস্বস্তি যে হচ্ছেনা তাও নয় । তবে, you've been my harshest critic and coming from you, these words are to be treasured. কবিতা লিখে এর চেয়ে বেশি কিছু পেতে চাইনি ।

    কয়েকটা কথা যা বেশ কিছুদিন ধরে মনে হচ্ছিল -- এই প্যারালাল লেখালিখির সূত্রে অনেক গালাগালি শুনেছি, দুরূহতা নিয়ে -- প্রথম দিকে রিয়াক্ট করেছি-- খুব ভিসিয়াসলি -- ধীরে ধীরে একটা উপলব্ধি হয় -- Poetry probably is the most difficult art-form and it takes a lot to appreciate it (it almost becomes impossible, when it doesn't conform to the known form)

    1. Unlike paintings, sculpture or music which are directly appealing to your senses (even untrained senses)-- you need to know at least the language in which the poem is written.

    2. A lot of information which are unknown to most people-- when they come as references make things complicated.

    3. When usual elements of poetry (in a given time and space) are absent (like chhanda, lyric in our case)-- they don't conform to poetry as we know of it.

    4. It gets even more difficult when the readers are actually educated because institutionalized education produces a structured and organized mind (more the formal education more rigid it is)that can't appreciate alternative thoughts which is akin to anarchy.


    হাংরিরা প্রচলিত মূল্যবোধকে ভাংতে চেয়েছিল (ইন্সটিটিউশনাল স্ট্রিকচার-এর হাত থেকে মানসিক মুক্তির জন্য) । হয়তো এই হট্টগোল একটা রাস্তা -- কিন্তু আমার মনে হচ্ছিল যে এর বাইরে একটা পথ আছে -- সেটা হল দুরূহতার অভিযোগ মেনে নিয়ে তাকে নিয়ে কাজ করা ।

    এছাড়াও আরও কিছু ব্যাপার ছিল -- যেমন চিত্রকল্প/কল্পচিত্র, লিরিক, ধবনির ইত্যাদি থেকে সচেতন বেরিয়ে আসা -- এটা জেনেও -- যে আজো চিত্রকল্পের অভিনবত্ব, সবচেয়ে বেশী অ্যাপ্রিসিয়েটেড হয়, -- কারণ কতগুলো মুদ্রিত অক্ষর থেকে সে অন্তত একটা ছবির সন্ধান দেয় যাকে আমাদের শিক্ষাগত সঙ্কীর্ণতার বাইরে গিয়ে অ্যাপ্রিসিয়েট করা যায় ( একটা ছবিকে অ্যাপ্রিসিয়েট করার যে সাইকোলজি, একই ভাবে লিরিক, ছন্দ, ধ্বনি ইত্যাদি অন্তত কানকে সন্তুষ্ট করে, আবার গদ্য নিজের ব্যাপ্তির কারণে অনেকটা এক্সপ্ল্যানেটরি হতে পারে)-- অতএব সরলতার খোঁজ ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না । আমি সক্ষম হয়তো এখনো হতে পারিনি-- চেস্টা করছি আর কী ।

    যেটা ব্যাপার হল এই লেখাগুলোর পেছনে-- সেটা হল, ব্র্যাকেট লেখার জাস্ট আগে থেকে তোমার এককালের উপদেশ মনে করে আমি বস্তুকে অব্জার্ভ করতে শুরু করি -- "প্যান্থার"-- যেভাবে... মনে আছে হয়তো । কিন্তু এটা আনন্দ দিচ্ছিল না । হঠাতই যেটা চোখে পড়ে সেটা একটা বস্তুর সাথে আর একটা বস্তুর সম্পর্ক -- এত ডায়নামিক, আর এত অনন্ত !

    সুকান্ত একদিন বলছিল যে প্রকৃত নতুন চিন্তা বলে কী আর কিছু থাকতে পারে ? আমার মনে হয় এই জায়গাটা এক্সপ্লোর করা যেতে পারে -- যদি কিছু থাকে এইখানেই আছে -- সম্পর্কের মধ্যে । আমি হয়ত সীমিত ক্ষমতায় পেরে উঠবো না । তোমরা পারবে এই বিশ্বাস ।

    ReplyDelete
  5. ভাবাচ্ছে, জাগাচ্ছে... কিছু বলার নেই। লিখুন, সব্য, লিখুন...

    ReplyDelete
  6. কবিতাটা অসাধারণ বলে ঈর্ষাকাতর হতে পারতাম, হয়ত হচ্ছিও। (কেন আমি পারলুমনা ইত্যাদি!)।

    একটা কথা আমি এর আকার সম্পর্কে বলব। লক্ষ করার মত ছোট লাইনের যাত্রা। আমরা নামতে শুরু করছি লাইন বেয়ে। আর তলিয়ে যাচ্ছি। এর সঙ্গে একমাত্রা বালির পতনের তুলনা করা যায়, আমি প্রথম দেখি আমার ছোট বেলায় একটা তৈরি হচ্ছে এমন বাড়ির সামনে। যে কোনো বালির স্তূপে এমন ছোট ছোট প্রবাহ নেমে আসে। একটু হাত ছোঁইয়ালেই এটা হয়। একটু চেষ্টা করলে অনেকটা গভীর কর্কশতায় ডুবে যাওয়া যায়। পরে রাজস্থানেও দেখেছি এক জিনিস! আর এই কবিতা। যত স্পর্শ করছি ঢুকে যাচ্ছি এই serenity-র দিকে। এক স্তর যেখানে অনুভূতির সবকটা দিক হয় জেগে উঠেছে নয় তীব্রভাবে ধ্বস্ত হয়েছে ফলে আর কোনও অনুভবকেই আলাদা করা যাচ্ছেনা। আদি দর্শনের নাগার্জুন বা আধুনিক নিটশে... এটা কবির পরম কামনা।

    লিখে চলো সব্যদা! শান্ত চিতা ভোজন শেষে যেভাবে অবশিষ্ট মাংস খণ্ডের দিকে তাকায় , একাকী জঙ্গলে

    ReplyDelete
  7. শুভ্রর মন্তব্যের প্রত্যুত্তরে বলতে হয় - যেমন কুকুর তার তেমনি মুগুর, যা সদর্থে এই - যেমন কবিতা ততো গভীরী মন্তব্য। ব্রাভো!

    ReplyDelete
  8. jatteri ! tomraa aabaar kakhan ele ? Subhra-re Jadi Boudhdha likhte paartaam ! tor saathe kothaa bolaar ihche kore naa maajhe maajhe... eto iirshaa hoy... Aryanilda

    "nirjonotaa ekTa jarurI abosthaa" eirakam ekTaa line ki tumi likhechhile -- konokaale ? aamaar maathaay ei ghurchhe....

    ReplyDelete
  9. Thoroughly enjoyed the reflections

    ReplyDelete
  10. শুধু কবিতা নয় এই মন্তব্যের অমোঘ টানটাকেও অস্বীকার করা যায় না । এই জন্যই এই ব্লগ এত প্রিয় ।

    ReplyDelete
  11. আরে সঞ্চিতা, আপনিও ছিলেন ! দেখতে পাইনি । বিশেষ কৃতজ্ঞতা আপনার কাছে । কবিতা লেখেন না, অথচ পড়েন-- তাও আবার কাঠ-খোট্টা পরীক্ষা কবিতা ! তদুপরি, মননশীল আপনার পাঠ, চিন্তা । আপনি মনে হয় গোটা বঙ্গদেশের একমাত্র উদাহরণ । ভাল থাকবেন ।

    অর্ঘ্য, ২ কবে আসবে ?

    ReplyDelete