Monday, January 2, 2012

ব্লেডলিখিত সত্তাচিহ্ন

৩৪

বড় বেশি করে ভেবেছো আর্দ্র নভেম্বরের কথা
পেঁচিয়ে গেছে জানুয়ারির কাচের গাছে
ভিজে মাটিতে কি শীত লতিয়ে চলে?
ঋজু পাতায় জলজ ব্যাকরণময়
একটা শব্দ – বাসস্থান – বারবার ঝাঁপিয়ে পড়ে
ছত্রখান করে দিয়েছে চলন
তুমি ফিরতে পারোনা বলে নিজের
অতি সাধারণ চামড়ার দিকে দেখো
সামনের নির্মীয়মান বাড়ির দিকে

মিস্তিরির বউ কি লজ্জা পায়,
সকালের স্নানের সময়ে হঠাৎ বমি পেলো
গমখেতে হলে এমন হত?
এই সিমেন্ট ও ইঁটের পাশে একটুকরো চালাঘর
শাশুড়িও তরুণী কিন্তু ঘোমটা দেয়না
শশুরের তক্তাপোশ থেকে গোঙানির শব্দ আসে
এখনো সপ্তাহে তিনদিন
মেঝের জলদি সোহাগ সে তো গ্রাম বা মেলা নয়
সন্তানের অভ্যাস

বাচ্চা ছেলেমেয়ে দিয়ে ভরে গেছে
সপ্তাহান্ত প্র্যাম কুকুর ও প্রাচুর্য
শুধু কখনই স্নিগ্ধতা না জানা খেলা ঘিরে রাখছে তাদের

তুমি কি এসব থেকে ছিটকে যাও?
শুধু খেলা থেকে ছিটকে আসে রুক্ষ চলন
রাস্তার বাঁকে একটা ভেজা জারুল
পেতেও বুঝি কেউকেটা হতে হয় দূরের শহরে















৩৫

হাওয়া নীচু হয় আর তুমি দেখো কীভাবে ছাই হাত
রুটি তুলে নেয় এই অস্থায়ী চুল্লিশিবির থেকে
কারা বেরিয়ে আসে? দূর থেকে বাতিল মাঠের গায়ে চেয়ে
কতদিন ভেবেছো এখানে কিছু সত্যি নয়
দূরের শহরে বুঝি সন্ধে হল বাজার ও ঘামের পাশে সত্যি মানুষের
চলাচল, কেন চলে আসে বলো এত লোক বাতিল পেরেকের অতিরিক্ততায়
রিক্ত লেগে আছে চিরকাল রাতের দেহে যেমন অনিবার্য
ভারি পুকুরের সত্তা... অথচ আসা থাকে
বারবার অপরিচিত জানুয়ারি কুয়াশায় ভিজে গেলে দূরে কোথাও
চেনা গান মুদির দোকান ফেরত মায়ের হাতে লতিয়ে ওঠে
বাবার ফাঁকা ঘরের সামনে কি দাঁড়ায় একটু আজকাল?
সামনে ব্লেডের পাতাওলা গাছ সমেত
জ্যোৎস্নার ধাতব ছায়ায় বাড়িটা কি ঝাঁকড়া হয়ে উঠেছে?
আর কেউ রাত করে বাড়ি ফিরবেনা বলে সন্ধেবেলা তালা পড়ে
শুধুই টিভির শব্দে শিহরিত হয়ে থাকে কথোপকথন

2 comments:

  1. দারুণ ঘোরলাগা একটা ৩৫ - উপরেরটা পড়ি নি। মনে হলো অস্পষ্ট দূরবর্তী স্মৃতির কোনো খন্ডচিত্র , ভাঙা ভাঙা স্বপ্নে দেখে - হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলে যেই একটা ঘোর কাজ করে মাথার ভিতর...যেন তেমন কোনো একটা জায়গা থেকে লেখা...

    'বাতিল' 'অসত্য' মাঠ , দূরের শহরের 'সত্যি মানুষ' -- খুব naive একটা perception, অল্পবয়সে যেমন থাকে -- যেন নিয়ে আসা হয়েছে ইচ্ছা করে। 'বাতিল পেরেকের অতি-রিক্ত-তা'র উপলব্ধি সেই nativity-r সাথে আবার এক ধরনের অন্তর্ঘাত সৃষ্টি করেও ফেলে যেন ।

    'রাতের দেহে ভারি পুকুরের সত্তা' - অদ্ভুত লাগলো। গাঢ় অন্ধকারে মাটি আর পুকুর আলাদা করা যায়না, আমি গ্রামে দেখেছি। খুব কাছে আসলে তার পর বোঝা যায়, একটা শক্ত মাটি, আরেকটা পানি।
    'সত্তা' কি পানি ? নাকি সত্তা একটা পুকুরের পুরো ইকো-সিস্ট্যাম? এবং একটা পানির প্রতিফলন করার ক্ষমতা?

    * * *
    শেষের 'ফাঁকা ঘর'
    'আর কেউ বাড়ি ফিরবেনা'
    'কথোপকথন শুধু টিভিতে'

    -- মৃত্যুর ইঙ্গিত? সেভাবেই যেন আমার কাছে এসে দাড়ালো কবিতাটি। আর শুরুর সেই ঘোর তীব্রতর হলো।

    ReplyDelete
  2. নানা ওলট পালটের মধ্যে লিখেছি এটা। স্মৃতিতাড়িত বলতে পারো। একটা ব্যক্তিগত দুঃখের মধ্যে দিয়ে যেতে গিয়ে স্মৃতির কোলাজে জড়িয়েছি। তারই মধ্যে পুকুর অন্ধকার শীতল ফাঁকা বাড়ি (সত্তা কি এটাও?) সব মিলে গেছে

    ReplyDelete