Sunday, June 28, 2015

অপ্রাকৃত সাহচর্যে

সোমনাথ সেন

গাছ থেকে নেমে আসছে অপ্রাপ্তমনস্ক ছায়া
ভঙ্গুর মৌচাক ভেঙে শীতলতা শুধুই উচ্চতর অবস্থানের
আবশ্যিকতা নয়
এই সহন ও শব্দের পাশে জড়িয়ে পড়া সাহচর্যে
জেগে ওঠে ঘুমন্ত  স্বর্ণভার   
চূড়ার উচ্চতম কৌলীন্যে
দেখি এক অপ্রতিম প্লাবনের ভেতর বেরিয়ে আসছে রাজপুরুষ
যেখানে চাঁদ ঠেকে যায়
দেবতার বিস্তৃতি ঠেকিয়ে দূরবর্তী ছন্দের দিকে প্রবাহিত তরল
প্রবৃত্তির বাইরে গিয়ে দাঁড়ায়

নিহত বৃত্তের লোভ ভেসে আসে বালিপাথরের দিকে
যতটুকু প্রজ্বলনের সম্ভাবনা অভিপ্রেত থাকে
বারুদের ও চামড়ার গাড়ত্বে
বুঝে যাই পৃথিবীর চরিত্রে কোনো
উচ্চতা নেই পোষ মেনে নেওয়া একটা বাড়ির দরজা পর্যন্ত
অরৈখিক থেকে যায় সালোক বৃত্তের নিচে


শূন্যের নিচে নেমে দেখি শূন্যতা আসলে উষ্ণতম দিনের মতই
নির্মাণের সহনশীলতা
হালকা আঘাত ভেঙে যে বিচরণ
রক্ষণ ও প্রাধান্য পায় নিহিত আড়াল গড়ে
স্পর্শের মোহ থেকে এভাবেই
তড়িৎস্পৃষ্ঠ গাছের প্রসঙ্গ আসে
বাকি যুদ্ধজয়ের উন্মুক্ত প্রকরণ ব্রহ্মের স্থিরতা পায়

এখানে প্রভূত বর্ণমালা ভেঙে দাঁড়িয়ে পড়ছে স্বাচ্ছন্দ্য
যেটুকু সূচনা থেকে এই অল্পবিস্তর জঙ্গল
বয়ে আনছে বিনম্র বালি পাথরের দাগ
সেই সহাস্য স্ফীতিই ভাসছে নিপীড়নের শেষে
এখন প্রবাহে মিলিয়ে থাকা অবিচল ঘোর অভিসন্ধি জানায়
উগ্র মাংসের ওপর 
  

এই যে সতেজ চামড়ার ওপর মৃত্তিকা দাগ, সেই তো বাদামী নয়?
নিতান্তই লয় ও তৃষ্ণা ঘিরে নামছে হিংস্র আভাস
যেটুকু পেরেকের দাগ রজস্তুতি
মেরুকরণ ও মেদের সমাধি ঘিরে
প্রকাশ করছে কড়ি ও কাঠের দূরত্ব – সেই আবছা আলোয়
পতঙ্গের ডানা ভেসে ওঠে
দেখি, একটা পায়রার দেহ থেকে উগ্র মাংসের আমেজ
পেয়ালার মুখ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে থাকে

যদিও পার্থিব কিছুই আর বিপর্যয়ের দিকে নেই
পাত্রের কিনারে এই চলনের দাগ
সেই তো শুধু প্রচল বিবরণভেদী নয়
বাকি হিংস্রতা ছুঁয়েও দেখছে না আমাদের
এই সাহচর্যে আদিমতার ধারণা বিচ্ছিন্ন হতে থাকে


তরলের ঘনত্ব বাড়তে থাকে
ক্রমশ গড়াতে থাকা আবহের ওপর নিরপেক্ষ শঠতা
যে শুধুই প্রত্নতত্ত্বের অভিসন্ধি মেখে প্রাচীন হয়েছে গাছ
তা নয় – নিরপেক্ষ টান ও উচ্ছ্বাস
লালাগ্রন্থির আকস্মিকতায়
ছেড়ে যায় অরৈখিক স্বাদ কোরক

আমিও ব্যক্তিগত প্রাধান্য ছেড়ে এই ভূমিকা জুড়ে দিই
নাব্যতার ওপর –
দেখি এক অপ্রাকৃত প্রতুলতায় নেমে যাচ্ছিস তুই
নিদেনপক্ষে এক মৌন বুদবুদের দিকে
অথচ তোর নিবৃত থাকার প্রচেষ্টা
অক্ষমতার প্রসঙ্গে যুদ্ধ বিলাসী হয়
  

শুধু উপমাই আশ্রয় পেয়েছে এতদিন, আজ নিয়ন্ত্রণের বাইরে
দেখি বিলম্বিত আড়াল
কিভাবে একের পর এক অলৌকিক কীটনাশকের ওপর
জমাট বাঁধছে মৃত পাখনা ও দেহের সমারোহ

জটিল শিরার ওপর নেমে আসা ভোঁতা ব্লেড
সজীব দেহপসারীনির ভূমিকা ঘিরে ধরে
বাইরে থেকে যায় কিছু ঘনিষ্ঠ রাস্তাঘাট
এই উজ্জ্বলতা, নেমে আসা মুদ্রণ 
কতদূর যে যায় - গড়িয়ে পড়া লালার ওপর প্রলম্বিত ঘণ্টাধ্বনি  
পুনরায় উত্তপ্ত করছে পোশাক
যেখানে ভোঁতা রঙ
কায়িক শ্রম ও সাহচর্যের মধ্যবর্তী পারদ গন্ধ ছেড়ে
নিভন্ত দাঁড়িয়ে থাকে শ্যামল ছায়াটির নিচে


বাকি গভীরতাটুকু বিভাজনে অপ্রাকৃত দাগ কাটে
ক্লান্তির পূর্ববর্তী বাধা ও সম্ভাষণ ছাড়িয়ে
আপেলের খোসা নিয়ন্ত্রণ পায় অব্যবস্থার দিকে

সারা রাত ধরে ছড়িয়ে পড়ছে জুয়ার ব্যতিক্রম
আর কেউ নেই মাথা ও পেটের মধ্যবর্তী গভীরতায়
যেটুকু নাস্তিক বাস করে
দর্শনের খোঁড়া পাখি কোথায় যে যায়
গৃহবন্দী প্রেতের বিভিন্নতায় আর কিছুই উল্লেখযোগ্য থাকে না
এই অঙ্গহীনতা শেষ পর্যন্ত ওম থেকে বেরিয়ে আসা শ্বাপদ
হালকা হাতমোজার ওপর
মাতৃত্বে দাগ কাটে


আমাদের অনুচ্চারিত প্রতিবিম্বের দিকে সচল হয় দাহ
কয়েকটা স্থিতিশীল ছুঁয়ে থাকা
স্থির তড়িৎ এর আকস্মিকতায় গড়ে নেয় উদার প্রলোভন
কিছুটা ঘন নুনের ওপর কাচ
যেমন পুনরায় অস্বচ্ছ করে জলের বিস্তার
সেই নেমে আসা তরঙ্গের ওপর
তুরীয় চেতনার বয়ে চলে বৃহত্তর মানুষের ঘাম

  
সীমাবদ্ধ খোলস ও কঙ্কালের চরিত্রে
ঘুমের সত্যতা ছড়িয়ে পড়লে
সন্ত্রস্ত রাডার ভুলে থাকে বোধহীন বারুদের ঘ্রাণ
নিয়ন্ত্রণের বাইরেও 
যে শুধুই দেরাজের দিকে ভেসে যায় অন্তর্নিহিত পাখনা তা নয়
ডুবন্ত আঁশের সহায়তায়
মাছের সম্ভাবনা গলনাঙ্কে পৌঁছে যেতে থাকে
খেয়াল এক অবিচ্ছেদ্য
বেতার যন্ত্রের ভেতর হাত ঢুকিয়ে তুলে আনি
সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম
দেখি খুলে ফেলা অন্তর্বাসের চেয়ে সহজ
আত্মহত্যা আর কিছুই নেই


সহজাত গঠন ধীরে ধীরে কোষের সমারোহে
মুদ্রিত হতে থাকে রক্তাল্পতার ওপর
এই যে শুষ্ক সাঁতার শুধুই ফ্যাকাসে সম্ভাবনাকে প্রগাঢ় করে
তা নয়, নিয়ন্ত্রণের ওপর জমাট রেচন ও মৃত্যু গাড়ত্ব চায়  

দৈনন্দিন ব্যস্ততার বাইরে
যেটুকু রাত্রির উল্লাস বিনোদনের পরিসর থেকে
উজ্জ্বলতা দাবী করে
পর্দার অনুচ্চারিত তরঙ্গে ভেসে থাকে তোরণ
সেই গতিপথের প্রিয়তম রেখাটিই
ভোগহীন চেতনার পরিপন্থী হয়


১০
পরিসীমার ফ্যাকাসে কাটিয়ে বিন্দু বিন্দু সৌজন্যে 
ছড়িয়ে যাচ্ছে সুদীর্ঘ জলাজমি
কোথাও ব্যস্ততার লালা বিন্যাস
কোথাও আবার উন্মুক্ত হয়ে পড়া মড়কের ইঁদুর
শেষ পর্যন্ত গুমোট ও বর্জিত কণার দিকে স্থায়িত্ব পায়

স্থাপত্যের কিনারা ভেঙে
জটিল হচ্ছে উপস্থিতি যেটুকু অনুচ্চারিত তরঙ্গ
সংখ্যাহীন কারবালার দিকে ভেসেছে শাশ্বত অতীত
সেই কোটরের ভেতর থমকে থাকা গভীরতা
পুনরায় আশ্বস্ত হয়
শ্যাওলা পড়ার সম্ভাবনা পিচ্ছিল থাকে
উজ্জ্বল দেয়ালের দিকে
এই অসামঞ্জস্যে জড়িয়ে পড়া বেদনা
প্রতঙ্গপ্রমান মুগ্ধতা নিয়ে পরিশ্রমী হয়
শুষ্ক রেণুর ওপর


১১
পুনরায় নিঃশুল্ক থেকে যায় প্রতিবেদন
বৈধতা ছাড়িয়ে এই যে আবহ পুনরুৎপাদনের কোষ ভেঙে
গড়িয়ে পড়ছে কষের লালা
আলজিবের টুকরো আঘাত ছাড়া
আর কতদিন শব্দহীন থাকা যায়
কতদিন কমলালেবুর খোসা ছাড়িয়ে টেনে নেওয়া যায়
উপেক্ষিত বিকেল
নিতান্তই শুষ্ক থাকছি বলে
এখনো জটিল কারকের কাছে প্রতিহিংসা পরায়ণ
জল নেমে আসে
মৃদু দরজা বেয়ে


Friday, June 26, 2015

অস্তিত্বের বাইরে

সোমনাথ সেন


এখানেই দাঁড়িয়ে পড়ি
ভেবেছ জমাট থাকবে অস্তিত্ব
উগ্র মাংসের ভিড় থেকে খসে পড়া আস্তরণ
তাও তো ভাঙা শব্দের পায়ে বিঁধে থাকে

মোহের বাইরে এই যে চলন, তা কি স্থিতকামী নয়?
বিদীর্ণ বাগানের রেণু কোথায় ছড়িয়ে পড়ে
পাথুরে উপত্যকা বেয়ে একটা মার্চের দুপুর 
কোথাও পতনোন্মুখ থাকে 
বুঝতে পারি, শীতকাল আসলে হলুদ চেহারার ছাপ পেরিয়ে আসা
অনুরোধের আসর

বেড়া টপকে এই কাছাকাছি চলে আসা
জলাজমি ও অস্তিত্বের মধ্যে ফারাক 
তা আসলে পাহাড়ি বাঁকের গভীরতা 
বাকি, অযান্ত্রিক মোহ ও আঁচড় নিয়মমাফিক বাঁক ঘুরলেই 
অস্থিরতা প্রগাঢ় হয় 

এই নেমে আসার সম্ভাবনা আসলে কতটা বিচ্ছিন্ন
তা চোয়াল ও দাগ থেকেই প্রমাণিত – হঠাৎ তুলনাহীন মানুষের দিকে
সমীচীন থেকে যায় পটভূমি
এটুকুই নিষ্প্রভ ছিল, দূরের চেতনা ঘিরে
প্রবল দৈব পাকের রাস্তা
বিকেল ও ক্ষুধার গভীরতা বাড়ায়

নিরুত্তাপ গ্রন্থির চেয়ে এই শিখা ভালো
বাকি অনিশ্চয়তার গন্ধ নিয়ে
কেউ কেউ নেমে গেছে
উজ্জ্বল নক্ষত্রের তলায়, আবার জেগে উঠছে ফুল
লালচে স্বভাব নিয়ে অবশ্যম্ভাবী পাকগ্রন্থি

অস্তিত্বের সামনে চলে আসা এই কি সহন?
যার পরিবর্তিত হতে থাকা বিনয়ের ছাপ ও ভঙ্গিমা
দেখে আমরাও বুঝতে পারছি
সতর্কতা ও আবর্তনের বাইরে গভীর জলাশয় ছাড়া আর কিছুই
তরল থাকল না

ক্রমশ রাত্রিকালীন সম্ভাবনা গাঢ় হলে
কালচে টিনের ওপর অস্বস্তি-বিদারক আলো ঠিকরে আসে
প্রতিসরণের উপস্থিতি ছাড়া
যে দাগ পরিস্ফুটই হত না 
তার নীলচে আঘাত তাড়না পেয়ে
আবহাওয়ার পরিবর্তন লক্ষ্য করে – নিভন্ত মানুষের চোখ আঁচড়াতে থাকে
গভীর মোহ
শুধুমাত্র যৌথতার প্রসঙ্গ আসছে না বলে
শীতকাল প্রাধান্য পেল না

এই বিতর্ক আসলে অনুদীর্ঘ মানুষের ছায়া
যদিও প্রবাহের দিকে শুধু মাত্র ছাপ থেকেছে তাই নয়
কিছু সম্ভাবনা উন্মুক্ত করে গেছে
জলজ বীজ – দেখছি কিভাবে পাথরের আড়াল থেকে
একটুকরো লেন্সের ব্যবহার প্রাধান্য পায়
সামান্য বলদের দিকে, ধারণার দিকে যে বয়ে আসছিল
সেই কলরব ও সচেতনতার বাইরে তবে কি আজও
স্বস্নেহ আঘাত ভুলে যায় প্রকৃত লেহনের পথ?

আমরা দেখছি প্রবল আলোড়ন
বস্ত্রহীন উত্তাপের দিকে একটা সুতোর বিস্তার
উজ্জ্বল করছে ধাতব আগুন –
বিজাতীয় পাত থেকে এভাবেই নেমে আসিস

সারা গায়ে লেগে থাকে কাঁটার শিহরণ
শুধুমাত্র দলছুট স্কুলের পাশে – আবছা কিশোরীর মুখ
পুনরায় ব্যর্থতা ঢেকে ফেলে

পেরিয়ে আসছি সমান্তরাল জনযোগ
যেটুকু কাপড় আড়াল করছে পাথর ও জঙ্ঘার মধ্যবর্তী সীমারেখা
বসন্তকালীন ভেঙে পড়া দেখে
শব্দের কাছাকাছি যাই – শুনে ফেলি এক
নিরুত্তাপ আজানের পাশেই জমাট বাঁধছে কফিন
কিছুটা অস্তিত্ব বিদারক চেতনার দিকে
এগিয়ে থাকে হালকা বাতাস
এও এক ধরণের আবর্তন – শুধুমাত্র অস্তিত্বের প্রসঙ্গ
নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে

অঙ্গহীনতা প্রাধান্য পায় 

Thursday, June 25, 2015

দর্শনের কুয়োর ভেতর পড়ে যাওয়া তোমাকে / নীলাব্জ চক্রবর্তী


আমার অনেকটা ভেতরে ঢুকে এই সময়টা যাচ্ছে... গ্যালারির জন্য ক্যাপটিভ অডিয়েন্সের জন্য সারাৎসার শুধু... ক্রয়ক্ষমতা নামের একটা সরু সরলরেখার ওপর মৃদু ও তৎসম হয়ে আসা এই যাতায়াত... কাট... ট্রলি... বিজ্ঞাপন খেতে খেতে দেখছে সারাদিন ধরে বৃষ্টির ওপর কাঁচের টুকরো ঝরে পড়ছে পরপর... দর্শনের কুয়োর ভেতর পড়ে যাওয়া তোমাকে দেখতে পাচ্ছি আসলে একটা সামাজিক ভোরের ভেতর ইস্তক... অনুবাদযোগ্যতায় দেখতে পাচ্ছি...

রঙ থেকে মুখ গড়িয়ে পড়ছে
মুখোশের ছেলে
খুলে রাখছে কমফর্ট জোন
ভান করছে
আর নেমে যাচ্ছে মাংসসভ্যতায়
কারও জানলায়
একটা শীতল দিন
পড়ে যাচ্ছে
রিক্সার পাদানি থেকে
টাওয়ার অবধি বিকেল হাঁটছে
এডিট করা বৃষ্টিতে
রবারের ফিকে রাস্তা
আমায় ফিরিয়ে দিচ্ছে না
ওই স্থিতিস্থাপক দিনের আদল
মুঠো মুঠো স্তনের পাথর
কনভেয়ার বেল্টের গায়ে জড়িয়ে যাওয়া
কবিতাভাবনা
কখনো কেউ পড়বে ভেবে

বানানো অনুভূতিগুলোর জন্য কষ্ট হচ্ছে এখন...

Tuesday, June 23, 2015

প্রিয় সম্পাদক



প্রিয় সম্পাদক,
আমি খা-খা আলোর মধ্যে বসে ভাবছি ভোর হল কী-না! শূন্যতার মধ্যে মোহর মোহর শব্দে ঝরে যাচ্ছে ফুলআমি জিরিয়ে নিচ্ছি নিষ্ক্রিয়তায় পিঠ রেখেএকটা খুব যতি হল মনের মাঝারে আমি ঠিক সেখানেই ধ্বনি ও অর্থের মাঝে বিষক্রিয়ার কথা ভাবতে ভাবতে সেরে উঠছি আর নেমে যাচ্ছি জ্বরের ভেতরে। প্রিয় সম্পাদক, আমি ঠিক জানি না কতদিন কবিতা লিখিনি, কবিতার আড়-মধ্য দিয়ে কতখানি মরচে রাঙ্গানো পথে আজ ভেরেন্ডার জঙ্গল, কাঁটানটে, পা ছড়ে যায় আর অব্যক্ত হয়ে ওঠে স্মৃতি ও করুণারাঙ্গামাটি বলতে এটুকুই বুঝেছি সম্প্রতি...গ্রন্থি  দিয়ে স্নায়ু দিয়ে মায়েলিন শীথ ভেদ করে ভারী ও অবশ সীসার নদী বয়ে যায়--টুকুই ভ্রমণ আমার। ফলে সম্পাদক, আমি জানতে চাইছি আপনার পত্রিকায় না ছাপার জন্য ঠিক কোন ঠিকানায় আমি আমাকে পাঠাব।
---------

প্রিয় সম্পাদক,
আমি খুব খুঁজতে চাইছি বৈরিতা। সযত্নে নামিয়ে আনছি মগজ লিভার কিডনি ফর্মালিন থেকে ধাপে ধাপে চলে যাচ্ছি  তীব্রতর কোহলের গ্রেডেগলে যাচ্ছে, ভেসে যাচ্ছে স্নেহআমি সমস্ত স্নেহাতীত টিস্যুর টুকরো থেকে মাইক্রোটোমের থেকে সেকশান নামিয়ে আনছি কাচের স্লাইডে স্টেনে ডিস্টেনেআমি বৈরিতা নিয়ে ভাবতে ভাবতে 63X অবজেক্টিভে ভাবতে ভাবতে দেখছি মানুষের কতবিধ সমস্যা  অথচ একএকটা সমস্যার জন্য পর্যাপ্ত মানুষের কীরম অভাব...
--------

প্রিয় সম্পাদক,
বানানের শুদ্ধতা নিয়ে বুঝতে পারছি আপনার অনুযোগ, এদিকে মোমবাতির তলায় ঘাম, ৪৫ ডিগ্রি, জানেন ৪২-ডিগ্রিতে কম্পিটেন্ট ব্যাক্টিরিয়ার মধ্যে হিট শকে ফরেন ডি এন এ ঢুকিয়ে দেয়া যায় আর সে তারপর অপারগ নিজের প্রায়োরিটি ফেলে দিয়ে উৎপাদন করে সোনাআমি সোনায় দাঁত বসিয়ে মেপে দেখছি শুদ্ধতাআকাশ থেকে ভাগ্যের ছায়া পড়ছে মাটিতে, আকাশ থেকে কুচি কুচি অভাব ভেসে বেড়াচ্ছেআমি শুদ্ধতার স্বাদহীনতার ভেতর থেকে দেখতে পাচ্ছি ফিলামেন্টের অ্যালয়ে মাছি বসছে আর আলোয় কাঁটা হয়ে উঠছে শালবন। ক্ষমা করবেন শেষ কটি লাইন জটিল হয়ে গেল।
প্রিয় সম্পাদক, আমি জানি আপনি জটিলতা পছন্দ করেন না। ট্যাক্স রিটার্ন-এ যতটুকু জটিলতার প্রয়োজন, হিসেবের বাইরে থাকতে যতটুকু দরকার, সিঁড়ি বেয়ে উঠতে যৎসামান্য যতটুকু, প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে যতটুকু, রাতের দিকে ঘোড়ার ছপটি হাতে আপনার চোখ উরুসন্ধির দিকে চকচক করে, লালা গড়ায়প্রাইমাল জটিলতাএই সব এইটুকু ছাড়াকবিতা তো সোজা সাপ্টা মানুষের কথা প্রকৃতির কথা হওয়া উচিতজেনারেশান গ্যাপ, ছেলের সাথে বনিবনা নেই, বৌ কে বোঝা মুস্কিল, নিজেকেও এমনকি নিজের আর্জ, ইম্পালস সময়ে সময়ে অবোধ্য লাগেএত ইংরেজি শব্দের কী প্রয়োজনআই এগ্রি, আমি সহমত, প্রচন্ড সহমত আজ মোতিয়া বেলির গন্ধে কী ভাবে জানি না,নাকের বদলে চোখে জল এল কোথাও শিশুবেলার বাগান থেকেআমি ফিরে তার জটিলতা দেখি, সারল্যের সাথে একসাথে বসে সেও পুতুল খেলছে...
------


প্রিয় সম্পাদক,
আমাকে বুঝতে গেলে জটিলতা অর্জন কর। সারল্য তোমাকে সারাতে পারত, সেই সব দিন চলে গেছে”—এভাবে বলতে পারতাম, গানের লাইন হিসেবেও মন্দ নয়তবে বিনয়ে বাধে। বরং এভাবে বলি, আমার কবিতার একমাত্র কাজ আমার একাকীত্বকে সন্দেহ করা। আত্মপক্ষের বাঁট ঘুরিয়ে দিয়ে অন্ত্রে ঢুকিয়ে দেওয়া ফলা। রেটরিক বলতে প্লেটোর কথা মনে পড়ার ছিল অথচ আমি ট্রটস্কির কথা ভাবছিলাম এমন কী বুড়ো শরীরে হঠাত গজিয়ে ওঠা অটোইমিউনিটির কথা। আসলে ইতিহাস থেকে, প্রতিরোধ ক্ষমতা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার কথা মগ্নতার কথা ভাবতে পারি না। প্রদাহ ও শীতলতার মাঝখান দিয়ে চলে যাওয়া রেখা আমাকে আশ্চর্য্য করে আমি হতবাক দেখি তার আপাত সারল্য অথচ তার কোষ ও কণার কী চূড়ান্ত জটিল ভারসাম্য...
---------

প্রিয় সম্পাদক,
এই ১১টা ৩২-শে এসে আমি কবিতা লিখছি না। গাড়ির মধ্যে হাওয়া বইছে। মাড়ির মধ্যে বিশদ করে হাওয়া বইছে। আমি পাতে ফলের হাড় আর কানকো ফেলে উঠে পড়ছি পরমুখী বাতাসে। কথা হচ্ছিল মানুষের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে। শবরদিনের শেষে ছন্দের বদলে সলিউবল তন্তু নিয়ে আরো মনোযোগী হওয়ার প্রয়োজন ছিল। অথচ তন্তু বলতে শুধু কোমরের কথাই ঘুরে ফিরে আসেসমস্ত মাত্রায়। আমি ডুবতে ডুবতে ডুবন্ত মানুষের ধর্মের কথা ভাবি, তার জিরে, মৌরির কথা, বুকের ভেতর বেড়াতে বেড়াতে রান্নাঘরের দিকে আসার কথাআর আঁশের স্মৃতিতে চকচক করে ওঠে জল। ডুবতে ডুবতেও এক ফালি তৃষ্ণার কথা মনে পড়ে। এই হাওয়ার সময়েও খুব মনে পড়ে।
---------

প্রিয় সম্পাদক,
আমি ধৈর্যের মধ্যে বসে আছি, আপনার বিলম্বের মধ্যেবাগান থেকে ফর্ম ডাকছে, আস্তাবল থেকে ঘন ঘন ডেকে উঠছে মোরগ, এথিক্স...। আমরা যা ফেলে যাচ্ছি সেটাই পৃথিবী-- এও আমাকে স্টাইরোফোমের কাপ থেকে বলে গেল। ঘোলাটে নোশানের মাঝে আমার ভালো লাগছে আপনার বিলম্ব, ভালো লাগছে আপনার পছন্দ, বাছাইপ্রক্রিয়াআমি জানি ইচ্ছের থেকেও বড়  শক্তি রয়েছে কোথাও যে আপনাকে পাহাড়ের কাছে নিয়ে যায়, সমুদ্রের কাছে, স্তেপে, সাভানায়, বেডরুমে। আমি অ্যাপ্রিসিয়েট করতে বাধ্য হচ্ছি গতিসমুদ্রের মধ্যে ডিসম্যান্টল হয়ে যাওয়া পেচ্ছাপের ফেনা, উপহার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়া মোড়ক আর শুভেচ্ছা। অথচ আমার ভালো লাগছে এই ধৈর্যের মধ্যে বসে থাকা। আপনার বিলম্বের মধ্যে ঠায় বসে থাকা...
--------

 
প্রিয় সম্পাদক,
প্রবল গ্রীষ্মের মধ্যে শীতের প্রসঙ্গ, বসন্তের কথা এতটুকুই আমাদের, সুখী মানুষেরা বিচ্ছেদের কথা বলে, আলো নিভিয়ে হিজর-এর গান শোনে অন্ধকারের ভেতরে বাদলা পোকা ওড়ে অন্তহীনআমি এতদিনে জেনে গেছি কমপ্লিকেশান-ই একমাত্র বাস্তব, বাকীটুকু ভাতঘুমের মত জৈবিকযা বস্তুর চেতন থেকে অজানিতেই দূরে ঢলে পড়ে। প্রিয় সম্পাদক,  বাস্তবের বাইরে নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের সাথে বুক ওঠে, নামে আমি তার সাথে অবিচ্ছেদ্য জুড়ে আছিফলে এই রিদম থেকে বিচ্যুত হয়ে নিজের হাতের থেকে সরে এসে পেথিডিনের সিরিঞ্জ নিয়ে খেলা করা ঘোলাটে বেড়ালের দিকে চটিও ছুঁড়তে পারি না...

-----
 
প্রিয় সম্পাদক,
আমি বেড়াতে এসেছি, আপনার ও আমার অবস্থানগত পার্থক্যের মধ্যে বেড়াতে এসেছিএখানে কুড়িয়ে পাচ্ছি রজঃস্বলা ঝিনুকের সারি, মুক্তোর ক্রিস্টালিনিটি থেকে দূরে, আরো দূরে। প্রিয় সম্পাদক, মানুষের ইতিহাস বলে সভ্যতার পূর্বে সে তার গুহাবাসি আঙুল তুলে এনেছিল একাধিক ঊরুসন্ধি থেকে আর গুহার দেয়ালে নানা রসের স্থিরচিত্র এঁকেছিল যা ব্ল্যাকলাইটেই কেবল দৃশ্যমানতা পায়সে শবর ছিল, জুগাড়ু ছিলএক চড়ুইভাতির দিনে বন্ধ হল্ট স্টেশানে এসে সে মদের হাঁড়ির খোঁজ পেলআর নেশার জোগাড়ের জন্য কৃষিকাজের কথা ভেবে উঠল। এর পর সম্পত্তির কথা আসে, উত্তরাধিকারের কথাএই সূত্রে তার বৃন্দযৌনতার থেকে সরে আসা। আমি যে আমার উত্তরাধিকারের জন্যে মানুষের মন থেকে সমাজ থেকে সরে আসবএও তো স্বাভাবিক, আর যা স্বাভাবিক তাকে নিয়ে আর যাই হোক যুক্তিগ্রাহ্যতার কথা বলবেন না, প্লীজ। প্রিয় সম্পাদক, আমাদের অবস্থানগত পার্থক্যের মধ্যে বেড়াতে বেড়াতে আমি কাচের ওপারে দেখতে পাচ্ছি মানুষের স্বভাব কাঁচা পেঁপের মত সবুজনক্ষত্রের জন্য উদ্দিষ্ট তাদের গানগুলি একের ওপর এক জমে উঠছেগণনার জন্য অপেক্ষা করা টাকার বান্ডিলের মত...

--------

প্রিয় সম্পাদক,
চোখ নামিয়ে আনতে হবে, তবেই দেখতে পাবেনআমি ধাতুর মত অর্জন করছি ক্ষয়, ধাতুর মত ব্যর্থ হয়ে উঠছিনুনজলের জগতে অসাড় আলোর মধ্যে আধাপ্রবেশ্য পাতলা পর্দা মাত্র হয়ে গেছি। আজ চারিদিকে ছুটি ন্যস্ত হয়েছেঘুম থেকে দেরিতে উঠেছে বেড়াল ও গাড়ির সেলসম্যানতারা এক পৃথিবীকে দেখছে, যে রঙের আড়ালে ফাটা ঠোঁটের যন্ত্রণা লুকিয়ে রাখছে। নাহ, আমাকে ভুল বুঝবেন না আমি গুণগত অবস্তুসকলে আজ আরোপ করতে চাইছিনা স্পষ্টতা...ইন ফ্যাক্ট স্পষ্টতা আমাকেও সরিয়ে রেখেছে কবিতার থেকে। কানের মধ্যে আজ কেউ সন্দেহ ঢেলে দিয়ে গেল সেই থেকে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছি পতনভীতির মধ্যে আপনাকেও হারিয়ে ফেলছি। ভালো আছি প্রিয় সম্পাদক, পাতলা পর্দা হয়ে,  দ্রাবকের চলাটুকু নিয়ে ভালো আছি, ব্যক্তিসত্ত্বা না হয়েই ভালো আছি।

------

প্রিয় সম্পাদক,
ফর্ম বলতে এক বিকৃত আয়নার কথা মনে পড়েযার মধ্যে দাঁত ঠোঁটের গভীরে ধ্বসে গেছে আর জিভের ভেতর ঢুকে যাচ্ছে কালো প্রবাহ। ফর্ম বলতে এক গানের সুর মনে পড়ে যার একাংশ হয়ে আছে গত পাঁচ সাতটা বছর। ফর্ম বলতে সংক্ষিপ্ত মনে পড়ে রাত্রির কথা সাবলীলতার কথা মনে পড়ে  আর গাছের, পাথরের কথা তাদের গোঙ্গানির শব্দ নিয়ে বেড়ে ওঠার কথা। ইঁট কাঠের কথাও মনে পড়ে, রাত্রের সৈকতে বুনো কুকুরের ভীড়ে হারিয়ে যাওয়ার কথা মনে পড়ে...

------

প্রিয় সম্পাদক,
আচমকা শেষ হয়ে যাওয়া রেখা, তট এই সব আমার প্রক্রিয়াজানেনই তো আয়ু থেকে সময় বার করে লিখতে হয়প্রজ্ঞা মাত্রেই কাউন্টার প্রোডাক্টিভ এটা বোঝার জন্য প্রজ্ঞা অর্জন করার প্রয়োজন হয় নাযখন সর্বনাম সমেত পিঠ ঠেকে যায় দেয়ালেতখন মেঘ কাটে, মানুষ দেখতে পায় রেসভেরাট্রল নিয়ে ৯০% গবেষণা স্পন্সর করছে ক্যালিফোর্ণিয়ার ওয়াইন ইন্ডাস্ট্রি। বাই দ্য ওয়ে দেশী সূলা যথেষ্ঠ ভাল কাবার্নে বানায়তথাপি আমি কারাকাসের মত খোয়া ওঠা রাস্তার গন্ধ, বৃষ্টিতে পীচফল মেশানো গন্ধের ওয়াইন অন্যত্র খাইনি কখনোঅবশ্য পাসপোর্ট খুলে ভেনিজুয়েলার অভিজ্ঞান দেখাতে পারব নাবলে রাখা ভাল ক্যালিফোর্ণিয়ার কার্লো রোসি ওয়াইনে আমি কেবল কেরুয়াক,হোবো আর অড্রি হেপবার্নের ফ্লেবার পেয়েছিথাক সে প্রসঙ্গ, বরং সর্বনামের কথা কেন এল সে নিয়ে বলি বলি, আমার প্রতিফলন ওয়াইন খেতে ভালোবাসে, আর আমি ওয়াইন খাই না অ্যাসিডিটি হয়। আয়নায়, বিছানায়, বাথরুমে, রান্নাঘরে নৈমিত্তিক অম্লস্বাদের মধ্যে হাটুরে ক্লান্তি নিয়ে জেগে ওঠা--দৃশ্য থেকে বাইশগজ দূরে হেলমেট ছাড়া, অ্যাবডোমেন গার্ড ছাড়া এই আমার কবিতার ইম্পেটাসটুকু আর এও যে কাউন্টার প্রোডাকটিভ সে নিয়ে আপনার অ্যাটলিস্ট সন্দেহ থাকার কথা নয়
------

প্রিয় সম্পাদক,
ফ্ল্যাটবাড়ির জানলা থেকে দেখতে পাচ্ছিকালো পাতার ফাঁক দিয়ে মূর্ত হয়েছে রাস্তা, ট্রাফিক, বৃষ্টি। ব্যালকনিতে দুজন অ্যাডাল্ট কথা বলছে ভুল বোঝাবুঝি নিয়ে, যোগাযোগের ফাঁকফোকর নিয়েকেতাবী সিন্ট্যাক্স ক্রমশ ডিসজয়েন্টেড হয়ে উঠছেঘোরাফেরা করছে আশার মধ্যে হিস্টিরিয়ার মধ্যেএই সান্দ্রতার মধ্যে কখন যে একটা দরদালান আকাশে চারিয়ে গেল বুঝতে পারিনি। ক্ষমা করবেন এইখানে ফায়ারপ্লেসের পাশে যদি ভঙ্গুরতার কথা, আবছা হয়ে ওঠার কথা মনে পড়েজানি আপনি বলবেন মীথের ভিতরে ঢুকে গল্প আর ক্লিশে হয়ে উঠে কবিতা পরিণতি পায়। কিন্তু আমি বুঝতে পারি, নিষ্পত্তি কাম্য নয়-- কবিতা তো সন্তানের দিকে স্নেহে মুচড়ে ওঠা পুরুষস্তন। ফলে যোগাযোগের কথা, চক্র সম্পূর্ণ হয়ে ওঠার কথা এই সব নিয়ে ভাবি না সম্প্রতিবরং বিষয় থেকে বিষয়ে ছুঁয়ে যাই আঙুল-- যেটুকু চামড়ার গন্ধ উঠে আসে, যেটুকু অসুস্থতা তার্পিন দাহ্যতা নিয়ে ফিল্মরোলের মধ্যে, ধ্বনির মধ্যে, মধু ও ক্ষারের ভেতর ঢুকে যায়
------

প্রিয় সম্পাদক,
আম খায়েঁ কী গিঠলি গিনেএই সব ছদ্মসংশয়ে আছি। অবশ্য আমি আপাদমস্তক সংসারি লোকআম খাব আর আঁটিও গুনবোএটাই তো স্বাভাবিক। আসলে রঙের থেকে দূরে আছি একটা আপাতগ্রাহ্যতা থেকে আমি সাদা কালো পৃথিবীর কিসসায় মাখোমাখো মানুষের চেতনার মাঝখান থেকে নদীটুকু অবলম্বনটুকু চুরি করে ঢুকিয়ে দিতে চাইছি ধূসর বিপর্যয় আর এরই মধ্যে শীলভদ্র প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিব্বত যাত্রারঠিক এই ভাবে চলে যাব আম খেতে খেতে আঁটি গুনতে গুনতে আই অ্যাম এ ননএনটিটি, বৃহত্তর পাঠকজগত আমাকে চেনে নাপ্লীজ ডোন্ট আস্ক মী সাচ টাফ কোয়েশ্চেনসহোয়াটস দ্য ইউজমাই অ্যানসার্স উইল নেভার বি হার্ড এনিওয়ে! নিরন্তর তোমাদের খামারবাড়িতে ধীর নামে সন্ধ্যার শাঁখএই পবিত্রতা আমার সহ্য হয় নাআমি বরং খুলির মধ্যে লেদ মেশিনের শব্দ রেখে চলে যাব সংসারের ভেতর তার খড়া জিরে ধনে সর্ষের তেলের ভেতর উপশমের চিহ্নমাত্র না রেখেলুঙ্গিতে রিজলোউশনের মহড়া না রেখেমুছে যাব
------

প্রিয় সম্পাদক,
আলো তো সঙ্ঘাত
প্রিজমের ক্ষত থেকে
অনিচ্ছা থেকে ঠিকরে ওঠা
ব্যাথা ও উন্মেষ

আলো বলতে আমি দোনোমনার কথা বুঝি, কখনো এক হলুদ প্রতিধ্বনির কথাও ভাবি যে ভেড়াদের নৃশংস চৌকো দাঁতের দিকে এগিয়ে দেয় রেটিসেন্ট নেকড়ের দাবনা। প্রিয় সম্পাদক আলো বলতে আমি দেখতে পাই, পার্কে, বুলেভারে, ফাঁসে, বুঁদির রায়তায়, রক্তের মধ্যে গজিয়ে ওঠা অসংখ্য কনফেশান বুথ অভ্যাস মত আস্তিন খুলে উন্মুক্ত করি তাস আর জন্মান্তরের উল্কিআলো বলতে আমি পাশের গলির থেকে শুনতে পাই অবিশ্বাস্য জড়তা নিয়ে কে যেন বলছেহাম কা ছোড় দে গোরি, হামার ধরম লেই যা
----

প্রিয় সম্পাদক,
প্রতীক ছাড়া আর কিছু দেখতে পাচ্ছি না এই সময়। মাংসের থেকে বিষয়ের থেকে বেরিয়ে আসছি আর মরচের ছোপ পড়া কাপড় মেলে দিচ্ছি ছাদে। আমার বসনে জং ধরে, মূর্তিগুলোয় জং ধরেআমি বাংলার থেকে দূরে ব্রথেলের মুখ খুঁজে বেড়াই বন্যার দিনে। প্রিয় সম্পাদক, একদিন মানুষ নিজের স্বাতন্ত্রের তাগিদে নিরাপত্তার তাগিদে খুঁজে নিয়েছিল টোটেম-- কুকুর করে রেখেছিল, পৈঠার হাঁস করে রেখেছিল আজ  আমি সার্শির, খড়খড়ির প্রতীকে চোখ রেখে দেখতে পাচ্ছিকী অবলীলায়  চুল্লি থেকে উঠে আসছে প্রতীক, গ্রন্থ থেকে উঠে আসছেওই তার হাত ঝলসে উঠছে লোমের ভেতর সটান ঢুকে যাচ্ছে,গোঙ্গাতে গোঙ্গাতে ভয়েরও ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে
------ 

প্রিয় সম্পাদক,
দিন পড়ে এল, কথাবার্তাগুলো পড়ে এলএবার তো যেতে হয়রক্তের ভেতর, ডি এন এর ভেতর হেঁটে যাওয়া এটুকুই পৃথিবীর যাওয়া। অনির্দেশের মধ্যে অতীতের ছায়া পড়ে জলেআমি দেখতে পাই কালেক্টিভ স্মৃতির ভেতর থেকে জলের ভেতর থেকে উঠে আসা মানুষের শৈশবগুলো শুধু পেকিং অর্ডারের ভেঙ্গে গড়ে ওঠাপ্রিয় সম্পাদক, ইতিহাস নিজেকে রিপিট করছে কি-না জানা নেই আমারআমি শুধু ক্ষতচিহ্ন দেখিদেখি হান্টার হাতে সেই সব ক্ষতের ছায়া ও কাহিনী তাড়িয়ে চলেছে আমাদেরআর জলমহিষের মত ভারী ও দ্বিধাহীন আমাদের পায়ের শব্দ মাটির ওপর, মাংসের ওপর ক্ষত বাড়িয়ে চলেছে

--------
 
প্রিয় সম্পাদক,
বধিরতা নিয়ে কামারশালায় চরিতার্থ হতে ঢুকে পড়াএতটাই ভ্রমণ আমার। ফিরে আসি ক্ষতের ভেতরে, পরিখার মাঝমধ্যিখান থেকে দেখি যাপনে কেঁপে উঠছে পৃথিবীঅথচ এও তো জানি আমার ক্রাইসিসটুকুই আমি, বাদবাকী শুধুই সময়। প্রতি রোববার মাংসের ঝোলে হাত ডুবিয়ে সংযম খুঁজি, আলুর টুকরো উঠে আসে, পরিখা ভরে যায় কুলগাছে লাক্ষা ক্ষরণে-- এই আমার বধিরের জন্য লেখা গান, এই আমার নির্মাণটুকুযা ক্রমশ বড় হয়ে ওঠা সময়ের বাইরে বসে শুনতে পায় উপদ্রুত জল থেকে, ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে উঠে আসা ডাকধীবর ধীবর...
------

প্রিয় সম্পাদক,
ভোর হয়ে এল জলেঘরে রাত্রি রয়েছে ঘুম নেইদেখছি প্রতিফলন কীভাবে জলের চেয়ে মানুষের চেয়ে বড় হয়ে যায়। আপনি বলছিলেন ৭৪ বছর পৃথিবীর বয়স বেড়েছে তিনি চলে যাওয়ার পরেতবু আমরা কেউই শেষতর কথাগুলি লিখিনি/বলিনিআমি সব মেনে নিয়েও ধ্বস্ত হয়ে আছি, আমার সিন্ধুপারে চাঁদ ডুবিয়াছে, ফুল, পাখি, বেতসের বাঁশি-- সব নিভিয়াছে...আমি ৭৪ বছরের বাড়তি ইতিহাস নিয়ে নিজের মধ্যে বসে আছি...ট্রাকের চাকার দাগে বসে আছি, ঘাসের ডগায় ঝুলতে ঝুলতে বসে আছি, ক্রিয়ার বাড়বাড়ন্ত নিয়ে বসে আছি...ঘোর থেকে সরে আসতে অশুদ্ধতাকেই নাম ধরে ডেকে উঠছি বার বার...
------

প্রিয় সম্পাদক,
বাস্পের খাঁচার ভিতর তুমি এক বাইশে শ্রাবণ, অথবা তোমাকে করি না, তাই তুমি কি করিনা?”—এরকম লিখতে পারতাম কিন্তু লিখতে পারছি না। আমাদের নরম সরম মাটি, মনোবেদনায় টইটই করেবেদনার থেকে গড়িয়ে পড়ে স্নেহআর স্নেহের নীচে সব থাকেশ্যাওলা, পাথর, পোকা মাকড়, মানুষের বিকারএই চিরন্তনের মধ্যে থ্যাঁতলানো টিকটিকির মত আমায় থেকে যেতে বলবেন না প্লীজ। আমি তো ভাত খাচ্ছি, ডাল খাচ্ছি, মাঝে সাঝে চুমুটা আঁশটা যে খাচ্ছি না তাও নয়তবে নবনীতে নেইবরং ভুট্টা ক্ষেতে কশ ছড়ে গেলে বুঝি জিভ এখনো হারায়নি স্পৃহা। ফলে জিভের কথাই লিখি, দাঁতের কথাই লিখি নরম সরম করে মিডলাইফ ক্রাইসিসের কথা লিখিযা একমাত্র কবিতা লিখতে বসলে টের পাই। আমি বিশ্বাস করি, শিল্প কেবল অভ্যাসের বাইরেই গড়ে ওঠেপ্রাকৃতিক উপাদান নিয়েও সে প্রকৃতির থেকে বিচ্যুত হয়ে বেড়ে ওঠেফলে আমি নিজেকে লিখি না, নিজের স্বভাব থেকে দূরে এক অপরিচিতের কথা লিখিউদ্ধৃতিচিহ্নের থেকে ছাড়িয়ে আনি বস্তুর চিৎকারটুকুতাকে লিখি

------

প্রিয় সম্পাদক,
মধ্যাহ্ন চেগে ওঠে বিরতিশহরে কর্ম কোথাও নেই আমের সিজনে উত্তরদেশের ফলে ছেয়ে গেছে বাজার বিপণী। আলুবোখারায় দাঁত রেখে বুঝিবর্জন ভাষাকে সরল আর ভাবনাকে জটিল করে তোলে। সারল্যের প্রসঙ্গে মনে পড়ল এত পারফিউমের দোকান চারপাশে আমি আর গন্ধ দিয়ে ফুলকে চেনার কথা ভাবতে পারি নাকাচের জানলার কাছে যদি বিশ্বাসযোগ্য না হয়ে উঠতে পারে তবে আর ফুল কীসের? বরং লজ্জিত থাকি ফলের পরই ফুলের প্রসঙ্গে আসার কারণে। আমার সমস্ত পতন শুধু ছায়ার ভেতর, অভ্যাসের ভেতরছায়া থেকে, অভ্যাস থেকে নিজেকে ফেলে দিতে দিতে এ সমস্ত বুঝতে পারি
------

প্রিয় সম্পাদক,
কখন যে ধাতু হয়ে উঠলো বাতাস, জ্যোৎস্নায় ঢুকে গেল পাথরের স্পেসেসেই খান থেকেই এলেখার শুরুলেখার শেষটুকু সেখানেই যাবে। এর চেয়ে অলংকার সোজা, এমনকী যাদু-বাস্তব নিয়ে, রূপক নিয়ে আমাদের নড়াচড়াও কখন প্রাঞ্জল হয়ে আসেপংক্তির ছিলা কাঁপে, ভাব কাঁপেকাঁপুনি সাঙ্গ হলে রিসাইক্লিং-এর দিন ফেরে। প্রিয় সম্পাদক, আমি দেখতে পাচ্ছি শেষ বলে কিছু নেই, ঘন্টা রিপিট করছে ঘন্টাকে, কুন্ঠা রিপিট করছে কুন্ঠাকেরেললাইনের পাশে প্রশ্নচিহ্নের ফিরে ফিরে আসাএটুকুই যৌনতা, এটুকুই জাউভাত আমার