অর্ঘ্য-র এই কবিতাগুলি নিয়ে কথার শুরুয়াৎ।
কোথাও ক্ষতচিহ্ন নেই
===============
পোস্টফিসের পাশে এক সারি বারান্দা - কে বোঝে কার চোখের ভিতর কী ?
যে বোঝে তার ডাকবাক্সে সাপ
একেকটা শুকনা বাগান - কবিতা লেখার সময়
কিছু হয় না
তার চোখের ভিতর স্মৃতির ভিতর ?
নীলক্ষেতে মুঠি মুঠি ঝুলন্ত শিমুল
এক পাশে অন্য পাশ ফিরে আছে
আমার বুঝতে এত দেরি হয়ে যায়
তাকিয়ে থাকি নীলক্ষেতের মোড়
তাকিয়ে থাকি উপচে পড়া বেনামি চিঠি খুলে পড়লে
খুব পাপ হবে কি?
পড়শুদিনের মরা চড়ুই ফুলে উঠেছে দরোজার কাছে
পালকগুলো উশখো খুশকো
কোথাও ক্ষতচিহ্ন নেই
একটা কাঠের মৌমাছি
কাঠের নিয়তি খুলে বেরিয়ে এলো কথার জগতে
বেরিয়ে আসলো না
ফসিল শহর ক্লাচ
============
ফসিল শহর ক্লাচ
গাইনি বিভাগ ভরে উঠছে নতুন রঞ্জনে
পিষ্টনের ভূত ডাকে
বোকা পাঁঠা
দূর থেকে
পোকা পাঠায়
ফসিল ক্লাচ গাধা পিটিয়ে ক্ষুরধার গাধা
আর আমার এ লোমে লো
এ লোমে লোল
বেণী
আসো হ
কলা , হ মৃত লোমে বিস্তারিত নতুন গজানো কপিকল
লা রে লাপ্পা নাচো
মাড়ির কামড় বেয়ে ঢুকে পড়ো আরোর গভীরে
মাথার ভিতর লোল
আয়োজিত
বিজল
একটু একটু করে গুনতে শিখবে
পুরানো শ্লেট মুছতে দেরী হয় হোকনা
সে তো কোনো দোষ করে নাই
সে তো শুধু মন্ত্রপূত লোল
তার্পিন শিশি
==============
হ য বর লো
সুঁইয়ে সূতা ভরো দেখি!
তার্পিন শিশি খুলে দাও
ডাক্তার
ঘুমের ভিতর
রক্ত আর জবা এক ফুল নয়
এক সময় নয় কেন -- - কুঞ্জবনে সুস্থ স্বাভাবিক লো -
আমি কি এখন গান করবো
পোস্টার খুলে মোম ঘষবো বনের ভিতর
আসল রূপের মতো, না?
আসল এক
ফোটা মোম গলে গলে পার হচ্ছে নিজেকে
ছোঁয়ালে ঠান্ডা
চোয়ালে চোয়াল
জিবে দুল
আর কিছু লাগবেনা তোমার
উত্তাপ? - আমার থাবা তোমার থাবা এক করো - এইবার আসো
গোল্লা বানাই
শরীর ভরা কাঁচা তেতুল টিপে টিপে কি
কানা কানি কি
চুলে রঙ দাও চুল কেটে ফ্যালো
আয়না সরিয়ে দেখো
তোমার পিছনে
তার্পিনে
কখন গলে যাচ্ছি আমি
কি ফাঁটল
কি গুঁড়ি
উপড়ে যায়
কাঠে করিডোরে
ভূতের গায়ে ধাক্কা মেরে বাসনুল্টে চিৎ - --
আছড়ে ভেঙে দেখো আমার ভিতর
খুব
আমার ভিতর চিনি আর চুন মিশ খাচ্ছে না
অমিত চক্রবর্তী - কবিতাকে তো কিছুই
ব্যাখ্যা করে না আসলে। সিউডোরিয়্যালিটি মানে হয়তো নেগেটিভ স্পেইস, যেমন বেরিয়ে
আসলো এটা সম্ভাবনা, আবার বেরিয়ে আসলো না... নেগেটিভ স্পেইস, তৈরি হয়েও খালি হয়ে গেল... এই আর কি। এস্পেক্ট ওরিয়েন্টেড রিয়ালিটি নিয়ে আমিও
কাজ করি। আছে দুইটা লেখা, সাম্প্রতিকের... শেয়ার করবো।
অর্ঘ্য - দোলনচাঁপা, সামান্য কথা থেকেই তো সব কিছু। বা সব কিছুই সামান্য কথা। অল্প কিছু সময়ের ভিতর
আরো অল্প কিছু সময় জাগল করে করে । তাই নয় কি?... "সামান্য কথা"
উপরে আরো কিছু যোগ করা হলো। ধন্যবাদ। আমি এখন নাচের মুদ্রা শিখছি। ইউটিউব দেখে
দেখে নৃত্যকলা প্র্যাকটিস করছি। কিন্তু এইকথা এইখানে কেন বলছি। বুঝতে পারছি না।
অর্ঘ্য - Chakravarty , আমার মনে হয় স্পেস একটাই, আমাদের perception গুলি layered. মানে, মগজ একেক সময় একেক লেয়ারে নিজেকে ইন্সট্রুমেন্ট করে। যখন একাধিক লেয়ার এক সাথে
ইন্সট্রুমেন্টেড হয়ে যায় - তখন কবিতা লিখতে হয়। বা কবিতা লেখার মানবিক অবস্থাটির
মধ্য দিয়ে ওই প্রতিফলিত বাস্তবের দিকে অগ্রসর হওয়া যায়। কিন্তু আমি যেইটা দেখি
সেটা হলো, যে কোনো লেয়ারই সাধারণ। অর্থাৎ, চরম ভাবে
আন-রোমান্টিক (রোমান্টিসিজমের শতাব্দীপ্রাচীন সংজ্ঞানুসারে)... আলোকিত মহত্বগুলি
কবি শিল্পীরা আরোপ করে এসেছে। কিন্তু এই আরোপ করার কারণ কী? আশা নির্মান? আশা লো - আশা লো - আশা - আমাকে উদ্ধার করো! আমি আদতে নির্মল !
দোলন - "অল্প কিছু
সময়ের ভিতর আরো অল্প কিছু সময় জাগল করে।" - নাচও আসলেই তাই। A very balanced juggling of a musical tonality that simultaneously exists
inside the dancer's mental and physical appearance. আপনি আগে কখনো
নেচেছেন কি? না নেচে থাকলে এইটা এখন অভিজ্ঞতায় আসছে আপনার। এইজন্য আপনার অবচেতন মন কথাটা
এখানে বলল। আপনি নিজে হয়ত বলেননি। আমরা আসলেই কখনো একা নই, তবু 'একাকীত্ব' বোধ থেকে কত মানুষ সত্যি করে একা হয়ে যায়।
অর্ঘ্য - "আমরা কখনোই
একা না" , বা "আমরা সব সময়েই একা" -কথা দুইটার ভিতরে কি একই ফাঁকি লুকানো নেই? :-)
দোলন - একদমই তাই
অর্ঘ্য। তবে, ক্ষেত্রবিশেষে প্রতিক্রিয়ার বদল ঘটে। হ্যাঁ, আমি এককালে নাচ
শিখেছি। লোকে কত কি ভাবে। আমি নাচের মুদ্রা ভাবি। মাঝে মাঝে।
অর্ঘ্য - কে জানে, হয়তো নাচের মুদ্রাই শব্দ আর ভাষা হয়ে গেছে কালে কালে?
দোলন - হয়েছে তো ! নইলে
মূক মানুষেরা নমস্কার কিংবা সালাম করেন কি করে? হাত বাড়িয়ে দিলে বাচ্চারা
হাত ধরে কেন? শব্দহীনতাই আসল ভাষা... :)
অর্ঘ্য - "শব্দহীনতাই
আসল ভাষা"...!! ... গায়কের সুর আছে, পেইন্টারের রঙ আছে, নর্তকীর অঙ্গ আছে, লেখকের শব্দ ছাড়া তো কিছু নাই।------------ আচ্ছা - অন্য ভাবে চিন্তা করা যাক।
------- নৈঃশব্দ আসলে কী? শব্দহীনতার কি আসলে কোনো অস্তিত্ব আছে? যতক্ষণ চোখের পাতা
খোলা - মগজ স্ক্যান করে চলেছে চারপাশ - আর অনুবাদ করছে শব্দে। অনুবাদ না করতে
পারলেই বিপদসংকেত! আবার যখন সেই স্ক্যানিং অনেক কিছু স্কিপ করতে শুরু করলো(অভ্যাস, পরিচিতি), তখনো মাথার ভিতর সর্বক্ষণ খেলা করে যাচ্ছে ভাবনা(শব্দ), বস্তু (শব্দ), সম্পর্ক (তাও শব্দ), সংযোগ(মিডিয়াম,শব্দ) কল্পনা (শব্দ), ভীতি (শব্দ), লোভ (শব্দ), প্রশ্ন (শব্দ), দ্বন্দ্ব (বিপ্রতীপ বোধ(শব্দ)), দৃশ্য(শব্দ)... আমি
সারাদিন কথা বললাম। শব্দ হয়নি। কারো সাথে দেখা হয়নি। অথচ কথা বললাম। শব্দহীনতার
অভিজ্ঞতা আমার একদম হয় না। সারাক্ষণ কিছু না কিছু ভাবছি। এমনকি ঘুমের ভিতরেও। নানা
ধরণের অবস্থা। একটা অন্ধকার গলি দিয়ে ৭-৮ জন । হঠাৎ এক দংগল লোকের ভিতর পড়ে গেলাম।
তারা অমায়িক নিরীহ ভঙ্গিতে কথা বলছে, গায়ে হাত রাখছে।
কিন্তু ঠিক যেন কথা বলছে না, সাপের মতো চোখ দিয়ে
সম্মোহন করতে চেষ্টা করছে। এক এক করে আমার সব মানুষ আটকা পড়ে যাচ্ছে। যেন আঁঠা
দিয়ে দেয়ালের সাথে আটকে ফেলছে কেউ। দৌড় দেওয়া ছাড়া গতি নাই। অনেকগুলো কালো কুকুর।
একটা দালান। জানালার খোপ আছে। গর্ত। দরোজা বারান্দার ফাঁকা ফাঁকা জায়গা। ...মানে
একটা বাজে স্বপ্ন। ঘুমের ভিতরেও শব্দ নদীমাতৃক। এক মুহূর্তের জন্যেও যেন নৈঃশব্দ
অনুভব করতে পারছি না। নিউরনে নিউরনে শব্দ ঘুরছে - কি ক্লান্তিকর। এর থেকে মুক্তি
কোথায়? একজন মূক মানুষের হাত নাড়ানোর পেছনে তার রীতির ধারণাটি(শব্দ) কাজ করছে না কি
মগজের ভিতর? ...... তবে "হাত বাড়ালে একটা বাচ্চা হাত ধরে কেন" ---- এইটা আমি জানিনা।
এইটা মনে হয় সত্যি সত্যিই শব্দহীন শরীরের ভাষা। কি নিষ্পাপ! ... বলাৎকারো কি
শব্দহীন শরীরের ভাষা? কি নিষ্ঠুর! নিষ্পাপ আর নিষ্ঠুরের পেছনে কি কোনো শব্দস্রোত নেই? (জানিনা)--------------- ...... শব্দের এই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অনুবাদক্রিয়া
যেখানে ঘোলাটে হয়ে আসছে, সেই আধ্যাত্মিক শূন্যের জায়গাটি আমরা বেশিরভাগ মানুষই সহ্যই করতে পারছি না -
তাকে ভরাট করার জন্য দিকে দিকে তৈরি করছি ব্যক্তিগত দেবতা, গোষ্ঠিগত রিচুলায়। শিলাস্তরের মতো উপাস্য-উপাসকের স্তর; এমনকি কবিতা (শব্দ)।
শব্দবন্দী মগজ খুব
হাঁপিয়ে ওঠে যেন। সুর একটা রিলিস। সুর - সুরের ওঠা নামা ... ধ্বনি ... অর্থহীন
বিশাল একটা পিয়ানো। একটা বেহালার ছর। তবলার চাঁদা। আমরা এখনো এতো নেচার পোয়েট্রি
করি - তার কারণ মনে হয় এই যে এর ভিতর একটা তীব্র রিলিস আছে। কে জানে ...
শমীক - ভাবা
যাক কিচ্ছু নেই। অন্ধকার
আছে শুধু। তুমি জেগেছ। তুমি চোখ খুলে তাকিয়ে দেখতে পাচ্ছ না কিচ্ছু। হাত দিয়ে স্পর্শ করার চেষ্টা করছ। কিছু পাচ্ছ না। শূন্যতা। এমন
সময় একটা শব্দ হল। শব্দ। ধরা যাক একটা ধাতব কিছু পড়ল। একটু ভারি। শব্দটা
খানিকক্ষণ ঘুরল। প্রতিধ্বনি
হল বা একটানা ধাক্কার আওয়াজ। তুমি
বুঝলে যেখানে আছ সেটার চারদিক ঘেরা। ঘর
হতে পারে, সুড়ঙ্গ
হতে পারে আবার মহাকাশযানও হতে পারে।
বাংলা
ভাষায় যাকে শব্দ বলে ইংরাজী ভাষায় তাকে কি বলা যায়? শব্দ – Noise. শব্দ
– Word. এই
যে শব্দ বললাম তা হল Noise । এটা লেখকের নেই। লেখকের হতে পারে না। এইবার
আলো হল। তুমি দেখলে
তুমি একটা ঘরে বসে আছ। আর সামনে
একটা কাগজ তাতে লেখা – “দেখা”। তুমি পড়লে আওয়াজ করে। Noise এল । সাউন্ড এনার্জি। তোমার কানে প্রবিষ্ট হল। তুমি শুনলে। দেখা। Noise ও
বটে Word ও
বটে। কিংবা
তুমি পড়লে মনে মনে। তোমার
ল্যারিঙ্কস নড়ল না। চোখ নড়ল। তুমি দেখলে। তোমার
মন সাউন্ড এনার্জি মনে করল। ঠিক যেন “দেখা” শব্দটা শুনলে। আসলে শুনলেও না।
লেখক
যে শব্দ নিয়ে খেলা করেন তা হল এই শব্দ Word। লেখকের
খেলা দু’টি। এক – শব্দ মাধুর্য। To create a noise that sounds
good. Sounds different। দুই – কল্পনা। To create a
symphony of meaningful words that forces our brain to interpret a visual, something known to the eyes.
প্রকৃত
লেখক এই দুই নিয়েই খেলা করেন। ভাষার
সৌন্দর্য আর কল্পনার সৌন্দর্য । কিন্তু
প্রশ্ন হল যে আসলে কি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ভাষার
সৌন্দর্য না কল্পনার সৌন্দর্য? আর কল্পনার সৌন্দর্যে শব্দ কোথায় – তা বেশি
শাব্দিক না চাক্ষিক ?
একটা
প্রশ্ন আসে নৈশব্দ নিয়ে। ধরা যাক
আমি বসে আছি পরীক্ষার হলে। কোন
আওয়াজ নেই। শুধু এক
মনে লিখে যাচ্ছি। ধরা যাক
বাংলা পরীক্ষা। আমি মহেশ
গল্পে শরতচন্দ্রের প্রকৃতিপ্রেম নিয়ে লিখছি। এইখানে
নয়েজ নেই। কিন্তু
ওয়ার্ড আছে। আমার মাথায়
আমি শব্দ ভাবছি। শব্দ জুড়ে
জুড়ে বাক্যের নির্মাণ করছি। এবং
হাতে ধরা কলমে লিখে যাচ্ছি। তাহলে
শব্দ রইল অথচ শব্দ রইল না। তাহলে
কি নৈশব্দ বলে কিছু হয়না?
এবার
ভাবা যাক সেই লেখক ছবি আঁকতেও জানেন। তিনি
পল্লীগ্রাম আঁকছেন। শব্দ নেই
শুধু তুলির আঁচড় আছে। তবে কি
একজন আঁকিয়ের নৈশব্দ আছে? লেখকের
নেই? ললিত শুনছি। নিখাদ সুর। কথা
নেই। গলা কাঁপছে। মাঝে মাঝে তবলার ঠেকা। সাউন্ড আছে। শব্দ
নেই। তাহলে কি গাইয়েরও নৈশব্দ আছে?
এবার
ভাবা যাক অংক করছি। একটা
অপারেটর বসালাম একটা সিম্বল (চিহ্ন) এর আগে। ধরা
যাক অপারেটর ডেল, চিহ্ন
থিটা। আসলে অংক কষছি। মনের গভীর কোণে একটা সূত্র খুঁজছি। কিন্তু পড়ছি ডেল থিটা ... আসলে ডেল ও জরুরি নয় থিটাও
নয়। আসলে ইম্পর্টান্ট সূত্রটা।
লেখাও
তেমনি। একটা লোক
বহু নারীতে আসক্ত। আবার সে
একজনকে ভালোবাসে। কিন্তু
বহুনারী সঙ্গ না করেও পারে না। অস্বস্তি
হয়। যেন অনেকদিন টেলিফোন আসেনি। অথচ মোবাইলের স্ক্রীনে হালকা মেদুর হয়ে আছে সিগনাল
চিহ্ন। মানুষটা
রমন করে। অন্য নারী
অন্য শরীর। হালকা আলো
আসছে বাইরে থেকে, সাইনবোর্ডের
আলো। সাইনবোর্ডে একজন লাস্যময়ী নারী। হয়ত সিনেমার বিজ্ঞাপন কিংবা সাবানে। আলো চলকে নামছে সাইনবোর্ড থেকে। কাঁচের গা বেয়ে বিছানায় নামছে। লোকটি সেই সামান্য আলোয় নারীটিকে দেখতে দেখতে বাইরে
তাকাল। বিজ্ঞাপনের
নারী শরীর আরো বিজ্ঞাপিত। লোকটা রমন
করতে করতে মুগ্ধ তাকাল বাইরে। বিছানার
নারীটি আর রমনীয় রইলনা।
এই
সামান্য বর্ণনায় কোন নয়েজের বর্ণনা নেই। শব্দ
অনেক আছে। কিন্তু
আসলে একটা দৃশ্য। এই
দৃশ্যটাই সব। পরম। লেখক লিখতে লিখতে দেখতে পাচ্ছেন। শব্দ দিয়ে বর্ণনা করছেন মাত্র। কারণ ওইটাই তার যন্ত্র। কিন্তু কোন শব্দ মাহাত্ম্য নেই।
যে
কোন শিল্প আসলে অনুভূতি। অনুভূতির
না থাকে রঙ, না
থাকে আওয়াজ। আঁকিয়ে রঙ
দিয়ে সেইখানে পৌঁছে দিতে চান তাঁর দর্শককে, ভাস্কর ডাইমেনশন দিয়ে, সঙ্গীতকার
আওয়াজ দিয়ে। আওয়াজগুলো
গুরুত্বহীন। গুরুত্ব
সুরে।
লেখকের
শব্দ গুরুত্বহীন। গুরুত্ব অনুভূতির।
অর্ঘ্য – আওয়াজ বিষয়ক আলোচনা খুব ভাল লাগল। তবে এটা আপনার সংযোজন। আমি আওয়াজ নিয়ে কিছুই
ভাবছিলাম না। আসলে ভুলটা আমার, “শব্দ” বলতে আমি কী বোঝাচ্ছি সেটা আগেই পরিষ্কার করা দরকার ছিল।
আপনার সমস্ত কথাই
খুব সুন্দর লাগল। দারুণ বলেছেন। কিন্তু কিছু কিন্তু আছে আর কি। যদি কিছু না মনে
করেন-
কিন্তু ১
“ভাবা যাক কিচ্ছু নেই। অন্ধকার আছে শুধু। তুমি জেগেছ। তুমি
চোখ খুলে তাকিয়ে দেখতে পাচ্ছ না কিচ্ছু। হাত
দিয়ে স্পর্শ করার চেষ্টা করছ। কিছু
পাচ্ছ না। শূন্যতা।”
অন্ধকার জিনিষটা কি? অন্ধকারের অভিভাব বা নিদেনপক্ষে
ধারণাটি কিভাবে তৈরি হল মাথায়?
“কিচ্ছু নেই” – এইটা বুঝলাম কীভাবে? কোনো
কিছুর অভাব টের পেয়ে নয় কি? অভাব যখন টের পাচ্ছি তখন নিশ্চয়ই কিসের অভাব, সেটা
কল্পনা করছি? সেই ‘কী’ বস্তুটার /
বস্তুগুলার স্মৃতি কি দিয়ে নির্মিত মাথার ভিতর? চিহ্ন নয় কি? শব্দ নয় কি? নাম নয়
কি? কিছুই যদি না থাকবে, তবে সেই শব্দ / চিহ্ন আসলো কোথা থেকে?
কিন্তু ২
“এই
সামান্য বর্ণনায় কোন নয়েজের বর্ণনা নেই। শব্দ
অনেক আছে। কিন্তু
আসলে একটা দৃশ্য। এই
দৃশ্যটাই সব। পরম। লেখক লিখতে লিখতে দেখতে পাচ্ছেন। শব্দ দিয়ে বর্ণনা করছেন মাত্র।”
দৃশ্য কি? আপনি যে
ভিযুয়ালের কথা বললেন, সেইটা আসলে কী? মাথার ভিতরে সেইটা কীভাবে রিপ্রেসেন্টেড
হচ্ছে? শব্দ, চিহ্ন ছাড়া কিন্তু হচ্ছে না।
কিন্তু ৩
“যে
কোন শিল্প আসলে অনুভূতি। অনুভূতির
না থাকে রঙ, না
থাকে আওয়াজ।”
আসলেও তাই। কিন্তু অনুভূতি জিনিষটা কী? অনুভূতি যদি একটা
দালান হয়, তাহলে সেই দালানের ইট কাঠ রড বালু সিমেন্ট কোথা থেকে আসছে? শব্দ চিহ্ন
ছাড়া অনুভূতির অভিজ্ঞতা মস্তিষ্ক প্রসেস করতে পারছে কি?
I think
the brain is a fast symbol processor. It’s obsessed with learned words and
symbols… can’t get enough of them. Moreover, it doesn’t munch on words, it
gobbles them like a monster, at an unimaginable speed.
It’s
not difficult to imagine that the pace at which our brain processes symbols, it
would for sure introduce a host of obstructions to our cognition; i.e., not all
symbols being processed at a given time will stop and say hi (we are unable to
figure each blade separately when the fan rotates).
Now, we
may refer to some of those abstractions as feeling, we may call some of them
spirituality, we may call them whatever we want really – as long as we are able
to descend them onto our lower wave lengths – i.e. expressions. What’s
important for me to note though, is that those translations must necessarily be
incomplete.
Since we
all do is dump more and more symbols into the brain, it always ends up with too
much of them to mess around with; even when it’s idle. So it’s effectively
never idle. I want to feel the silence. The complete ZIP of signs and words. I really
do. I absolutely and utterly despise the fact that I readily allow my brain to
name stuff. Put symbols and labels on stuff. But I can’t help it. It kills me.
Love u
all,
Arghya.
শমীক - আপনি বললেন, "কিছু মনে করবেন না।" আপনি আসলে বোঝাতে চাইলেন
"আহত হবেন না”।
কিন্তু
সেটা যদি না বুঝি। ধরা যাক
আমি বুঝলাম Don't do
anything in your mind. এবং উত্তরে বললাম মনে (মনে) আমি
অনেককিছুই করব। I will do many things in my
mind. কিন্তু আপনি যা বললেন সেটা আমি বুঝলাম। বুঝতে পারলাম। কারণ
বাংলাভাষায় সাধারণত ঐ বাক্যবন্ধটি কি বোঝাতে ব্যবহার হয় আমরা জানি। জানি, কিন্তু কেন? কারণ সেই
ব্যবহার বার বার শুনেছি।
হয়ত
এই কারণেই ভাষা পৃথিবীর সব থেকে বড় প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে। আপনার আগের বক্তব্যে আমি অনেক কিছুই লিখেছিলাম। লিখেছিলাম কারণ আমার মনে হয়েছিল আপনি শব্দের এই
প্রাতিষ্ঠানিকতাকে বারংবার প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন।
আমি
বলতে চাইছিলাম ভাষার এই প্রতিষ্ঠানিকতার উলটো পিঠটা। ঐ যেমন লিখলাম মনে মনে আমি অনেক কিছুই করব।
এরপর
আপনি যা বললেন তা নিয়ে আমি বলতে নাচার। আপনি
যা বললেন তা আজ সায়েন্স। আবার আগে
দর্শন (Philosophy) ছিল। হিন্দু পুরাণে মায়া যাকে বলে। আবার হলিউডে যা ম্যাট্রিক্স থেকে ইনসেপশন হয়ে যায়। আবার মূল বিজ্ঞানে যা Cognitive Neuroscience নামে প্রতিষ্ঠিত।
একসময়
আমি একটা কথা খুব ভাবতাম। ধরা যাক, একটা লাল
মোজা পড়ে আছে। দোলনচাঁপা
তুলে আনল। বলল, লাল রঙের
মোজা। আপনি আর আমি দেখলাম। দু’জনেই বললাম, লাল। প্রশ্ন
হল, আমরা
তিনজনেই বলছি লাল, কিন্তু
রেড ওয়েভলেংথ প্রতিফলিত হয়ে চোখের রেটিনায় পৌঁছে , নিউরনে
নিউরনে বাহিত হয়ে ( ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ?) মগজে যে অনুরণন তুলল, তা তিনজনের
ক্ষেত্রেই এক কিনা।
অর্থাৎ
আপনার লাল, আমার
লাল আর দোলনের লালের অনুভব এক কিনা? এটা আমরা কেউ কোনোদিন বুঝতে পারব না। কারণ আমাদের প্রত্যেকের জন্মমূহূর্ত থেকে লালের
অনুভূতি একইরকম। কিন্তু তা
তিনজনের ক্ষেত্রেই এক কিনা বোঝার কোন উপায় নেই।
এই
একই কথা শব্দের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ভাষার
ক্ষেত্রে যে খানিকটা হলেও আলাদা তা আমরা বুঝি। যেমন “ঘাস” শব্দটা দোলন আমার আর আপনার ক্ষেত্রে
আলাদা অভিঘাত সৃষ্টি করবে। আপনি
হয়ত ভাবলেন ফুটবল মাঠের অফুরাণ সবুজ। দোলন
হয়ত ভাবল ছেলেবেলার পার্কের দোলনা থেকে পড়ে গিয়ে, সাদা
স্কার্টে থেঁতলে যাওয়া সবুজ। আর
আমি ভাবলাম আমার ছেলেবেলার বাড়ীর পাঁচিলে ইটের ফাঁকে ফাঁকে উঁকি মারা ঘন সবুজ।
আমি
এতটা অবধি ভাবি। এরপর, আপনি যা
প্রশ্ন করলেন তা ভাবি না। ঠিক যেমন
ভাবি না বিগ ব্যাঙের আগে কি ছিল। ভাবা
সম্ভব নয়। কারণ সেই Singularity-এর
আগে পৌঁছানো যাবে না। আপনি আজ যা
বললেন সেটাও আমার Singularity
–এর
উর্ধে।
অর্ঘ্য – শমীক, হিন্দু পুরাণ, মেট্রিক্স, ইন্সেপসন, কগ্নিটিভ নিউরোসায়েন্স" - (!!!)
- আমি কিন্তু খুবই ঘাবড়ে যাচ্ছি ভিতরে ভিতরে!
“আমার
মনে হয়েছিল আপনি শব্দের এই প্রাতিষ্ঠানিকতাকে বারংবার প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন।
আমি
বলতে চাইছিলাম ভাষার এই প্রতিষ্ঠানিকতার উলটো পিঠটা।”
ধন্যবাদ। ব্যাপারটাকে অন্যভাবেও ভাবা যায় আর কি - যে - আমি
শব্দ/চিহ্নের সমস্যাগুলো বুঝতে চাচ্ছি। এর মধ্য দিয়ে বুঝতে চাচ্ছি
"নৈঃশব্দর" কাছে পৌছানো সম্ভব কি না। আমি পৌঁছাতে পারছিনা। জানিনা এইটা
শুধু আমারই সমস্যা, নাকি আরো অনেকেরই এমন অভিজ্ঞতা হচ্ছে...
আপনি "ভাষার প্রাতিষ্ঠানিকতা" এবং তার "উলটো
পিঠ" বলতে যা বলছেন তা আমি বুঝতে পারছি।
তবে আমার যেটা মনে হয় - "ভাষা" অনেকটাই আসছে
শব্দ/চিহ্ন থেকে। কিন্তু "ভাষা"
ব্যতিরেকেও শব্দ/চিহ্নের অবস্থান আছে। অর্থাৎ, সব চিহ্ন ভাষার ভিতর ধারণ করা
যাচ্ছে না। সুতরাং আপনি যে "উল্টোপিঠ" দেখাতে চাচ্ছেন আমাকে, আমি তার
ভিতরেও কিলবিল করতে দেখছি শব্দ/চিহ্ন। আমার মনে হচ্ছে একটা ভাজ করা কাগজ সোজা করা
হলো শুধু।
যাই হোক। ভাল থাকুন।
রাজর্ষি চট্টোপাধ্যায় – আমি আমার
কয়েকটা ভাবনার কথা বলতে পারি। যেমন, শাব্দিক যা কিছু তা শ্রাব্য ও দৃশ্যের
অন্তর্গত। ধ্বনিত অথবা লিপিত। হতে পারি আমি শুধুই অন্ধ, অথবা, বধির। অথবা, উভয়ত।
যদি তা না হই, শব্দ সেই অমোঘ যা শ্রাব্য – দৃশ্য বাহিত আমার অখন্ড চেতনার
ধারক। কবিটায় শব্দ সাযুজ্য যেহেতু কবিতার নিজস্ব নিষ্ঠা ও শৃঙ্খলা সেহেতু শব্দের
অভ্যন্তরস্থ সংযুক্তি ও বিযুক্তি কবিতার এক অনন্য বিস্ময়। এবং তা ইন্দ্রিয়সমূহের
অতীত।
অর্ঘ্য – আপনার কথাগুলো খুব সুন্দর লেগেছিল। অল্প কথায় অনেক কিছু বলে
ফেলা হলো যেন। নানা ভাবনার উদয় হয়। যেমন – আমরা কি ‘কবিতাকে’ তার নিজের জায়গায় ফিরিয়ে দেয়ার
কাজ করি কবিতা লিখে লিখে? কবিতা তো একটা ডাক। অর্থাৎ, আমাকে বুলায়, বুলাইলো,
বুলায়া যাইতেছে।
আপনার কথাগুলো অতি-সরলীকৃত ভাবে ভাবা যাক –
বললেন – শব্দ হলো শ্রাব্য ও / বা দৃশ্য
বাহিত (ধ্বনিত, লিপিত, দৃষ্ট, শ্রুত ইত্যাদি) – তাহলে অন্তত এইটা পরিষ্কার যে – শব্দ মাথার ভিতর নাযিল হচ্ছে না, কোথাও না কোথাও থেকে
স্মৃতিতে / সংবেদনে / মগজে আমদানি হচ্ছে ইন্দ্রিয়র মাধ্যমে। এখন সেই আমদানি হওয়া
শব্দ একজন লেখক ব্যবহার করছেন এমন এক কালোশিল্প দিয়ে যে তা জন্ম দিচ্ছে কবিতার – কবিতা – যা কিনা ইন্দ্রিয়সমূহের অতীত।
এইখানে এসে চুপ করে যেতে হয় আর কি। কারণ তা না হলে প্রশ্ন
জাগে – ইন্দ্রিয়বাহিত শব্দ জন্ম দিচ্ছে ইন্দ্রিয়াতীত কবিতার – এইটা কীভাবে সম্ভব? তাহলে কি এমন কিছু শব্দও আছে যেগুলো
ঠিক ইন্দ্রিয়বাহিত না? যারা নিজেরাও ইন্দ্রিয়াতীত? ঘুরিয়ে বললে – ইন্দ্রিয়বাহিত হয়ে সবকিছু আসে না, কিছু কিছু আসে – যারা আসে, তারা তাদের ইন্দ্রিয়াতীত (বা এত কিছু না, স্রেফ
ভুলে যাওয়া) যময ভাইবোনদের খুঁজে বেড়ায় – আর তাদের হাহাকার আমরা টের পাই
একটা কবিতার ভিতর?
এইখানে দুইটা জায়গার কথা চলে আসছে। এক হচ্ছে মগজের ভিতর,
আরেকটা মগজের বাইরে। দুইটাই পরম রহস্যময় জায়গা। কারণ মগজের ‘ভিতর’ যদি হয় ইন্দ্রিয়সচেতনতা, মগজের
বাহির হবে প্রত্যক্ষ সচেতনতার অভাব – অর্থাৎ ‘বাইরে’ মানে যে একেবারে খুলির বাইরে – তা না, খুলির ভিতরেও ‘বাইরে’ থাকবে।
প্রশ্ন হচ্ছে, কবিতা কি দুই জায়গাতেই আছে? অর্থাৎ একজন কবি,
বা একটা লিখিত কবিতার অবর্তমানেও কি ‘কবিতা’ উপস্থিত থাকে? সমস্ত গ্রহ জুড়ে কি লিপিবদ্ধ হচ্ছে একটি
বিস্তৃত একক কবিতা? একটা বিশাল ইলেকট্রন?
মাঝে মাঝে মনে হয়, একটা লিখিত কবিতা হলো একটা দৃশ্যের মত – যার দিকে আমি চোখ ফেরালাম। চোখ সরিয়ে নিলে সেই দৃশ্যটা
আমার কাছে ‘অদৃশ্য’। কিন্তু আসলে অদৃশ্য না।
অর্থাৎ লিখি বা না লিখি, কবিতা আছে। লিখার মধ্য দিয়ে কবিতার সাথে একাত্ম হওয়া হলো,
এই যা। না লিখলেও কবিতা আছে – শুধু আমার ভিতর নাই।
আর আমার ভিতর নাই বলতে আমি বলছি শুধু প্রত্যক্ষ চেতনার কথা।
তার বাইরেও অনেক নিউরন থেকে যায়। তাদের কাজকর্মের আমি কিছু বুঝি না। অর্থাৎ, আমি
নিশ্চিত যে যা কিছু মাথার ভিতর ‘খেলা করছে’ তার সবটার ব্যাপারেই ইন্দ্রিয়সচেতনতা কাজ করে।
দোলন – যখন লিখেছিলাম, 'শব্দহীনতাই আসল ভাষা', তখন আমরা আলোচনা করছিলাম নাচের মুদ্রা ভাষা হতে পারে কীনা, সেই নিয়ে। আমি বলেছিলাম, পারে। সেটা নাচের মুদ্রাই হওয়ার প্রয়োজন নেই সব সময়। সেটা
যে কোন ধরনের physical
expression
হতে পারে। Now, what is a physical expression?
It's an assimilation of very dynamic, yet subtle imageries of visible and
invisible continuity. A process of communication that may or may not want to
communicate in every possible defined way. তো সেইখান
থেকে,
সংকেত আমার কাছে শব্দ হয়ে আসে। তাকে ব্যবহার করা যায়
ইচ্ছেমত কারণ, সংকেত অর্থাৎ symbolism অর্থে আমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে একটা পরিচিত visual-কেই রেফার করছি। ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে, সংকেত একটা concept-কে রেফার করে।
আমার প্রশ্ন আসে, যে মানুষ visual source-এর সাথে relate করতে
পারছেনা, তার কাছে সেই নির্দিষ্ট সংকেতগুলো কীভাবে আসবে? Through some concepts only that cannot have a visual
effect?
স্পর্শের মাধ্যমে ? তার কাছে এই সংকেত নিয়ে কে যাবে ? Must
be someone to whom all the choice is
readily available? In that case, that particular person is definitely taking
the liberty to define and interpret those imageries just the way they come to
him.. and there lies the eternal gap of communication. তাহলে সংকেত তো আর ততটা rigid রইলনা। আমরা তাকে ভেঙে ফেললাম, তার কোডকে decipher করলাম, শুধু একক মাত্রায়
নয়,
বহু মাত্রায়। এভাবে, সংকেত শব্দ সৃষ্টির মাধ্যম হয়ে উঠলে তা শব্দ থেকে বড় হয়ে
উঠল।
আবার, শব্দের সারল্যকে
অতিক্রম করার কোন প্রশ্ন তার ওঠেনা। কারণ, শব্দ, word অর্থে, কোন বিশেষ expression format-এর ওপর নির্ভরশীল
নয়। সে তো অক্ষরধারায় বাহিত হচ্ছে। অক্ষর, কেবলই কথাকে express করে। এমন মনে হয় যে, যা কথা নয়,
কথা হয়ে উঠবে না কখনো, তা শব্দও নয়। অর্থাৎ, কথার অর্থ আছে, কথাই চেতনার দ্যোতক।
শব্দ তাহলে কি? অথচ ভাষা সংকেত নির্ভর নয়। সংকেতের লিমিটেশন এখানেই যে তা সমস্ত
ভাবনাকে একসূত্রে বাঁধতে পারেনা। আমরা সংকেত ভাবিনা। কথা ভাবি। কথা শব্দ নয়। শব্দ
কথার বাহক, ধারক। সংকেত কথার পার্শ্বচর হতে পারে বড়জোর।
চিহ্ন কি হবে তাহলে? বডি ল্যাঙ্গোয়েজকে কি চিহ্ন বলা যায় ?
হাতে হাত রাখা কী? চিহ্ন না সংকেত, নাকি ভাষা ? ভাষার তাহলে কোন মুখ নেই, শরীর
নেই? আপাত পরিচিত কয়েকটি উপাদানের সমন্বয়ে তৈরি abstract একটা কাঠামোই ভাষা? কিন্তু কাঠামো mostly
definitive. It has a beginning and should grow towards an end.. ভাষার বৃদ্ধি ও মৃত্যু আছে। তাকে বদলাতে হয়, লড়াই করতে হয়
ব্যবহারিক সমস্ত orthodox বলিরেখার বিরুদ্ধে।
ফলত ভাষা সমসাময়িক দর্শনের সাথে ঋজুরেখায় হাঁটে।
সংকেত, চিহ্ন তাহলে কি একটা সমান্তরাল স্পেস? শব্দের যাবতীয়
সারল্য, abstraction, জটিলতার পাশাপাশি
যা নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার দিকে এগিয়ে চলেছে ও ভবিষ্যতে ভাষার অবয়বহীন কাঠামোকে
সম্পূর্ণ বদলে ফেলবে ?
অর্ঘ্য – “In that case, that particular
person is definitely taking the liberty to define and interpret those imageries
just the way they come to him.. and there lies the eternal gap of communication. তাহলে সংকেত তো আর ততটা rigid রইলনা। আমরা তাকে
ভেঙে ফেললাম, তার কোডকে decipher করলাম, শুধু একক মাত্রায়
নয়,
বহু মাত্রায়।”
- অদ্ভুত
লাগলো কথাগুলি। এখানে আপনি কিন্তু বলছেন অতি সূক্ষ্মস্তরের যোগাযোগের কথা। গড়পড়তা
কমিউনিকেশন কিন্তু চলছে। চলছে কারণ - ওই যে লিবার্টি নেয়ার কথা বললেন, তাতে খুব কম মানুষই "বিপজ্জনক" ভাবে
ব্যতিক্রমি। বেশিরভাগ মানুষই জীবন পার করে দেয় সাধারণ জিনিসের জন্য সাধারণ সাধারণ
ইন্টারপ্রিটার ব্যবহার করে। যোগাযোগের ওই চিরকালীন ফাঁক থাকা স্বত্তেও আমরা প্রেমে
পড়ি। একজন মানুষকে হঠাৎ খুব চেনা মনে হয় :) ... সেই চেনা মনে হওয়া স্বভাবতই
বেশিদিন থাকে না। থাকে স্মৃতি, একঘেয়েমি, অভিমান প্রভৃতি ভাঙাচোড়া ঘর। কেমন মজা?
শব্দ, ভাষা, চিহ্ন, সংকেত - যামু কই!
আপনার কথাগুলো বার বার পড়লাম। পড়তে পড়তে
মনে হলো - চিহ্ন,
শব্দ, সংকেত, ভাষা
(ক্রমবদল) - এদের আলাদা আলাদা করে না দেখে, বরং
কীভাবে এরা সংযুক্ত তা নিয়েই বেশি চিন্তায় পড়ে যেতে হচ্ছে।
একটা কথা মনে আসলো - ডিকশনারি কী? --- একটি শব্দপাতার গাছ - অনেক অনেক ডাল - একটা পাতা মানে
একগুচ্ছ পাতা। কিন্তু আবার ভিন্ন ভিন্ন ডাল। ডালগুলো শেষ মেশ শুধু একটা জায়গায়
গিয়ে পরস্পরের সাথে মিলেছে - গুঁড়িতে - মানে, গুঁড়ি হলো স্বয়ং "ডিকশনারী" শব্দটি। অবশ্য
আরো কিছু শব্দ আছে গুঁড়ির ভিতর পোকামাকড়ের খোলের মতো - সেরকম একটা শব্দ হলো
"অর্থ"।
--চিহ্ন,শব্দ,কথা---
এইবার এদের নিয়ে আপনার মতো না ভেবে একটু
অন্যভাবে চিন্তা করা যাক।
আমার কাছে চিহ্ন আর অক্ষর একই জিনিস।
শব্দ আর কথাও একই জিনিস। ব্যাখ্যা করি।
অ আ ক খ - এগুলো চিহ্ন - আবার এদের
প্রত্যেকেরই একটা ধ্বনিরূপ আছে। সুতরাং কথা যদি ধ্বনিসমষ্টি হয়, তাহলে কথা চিহ্নসমষ্টিও। মানে কথারো অক্ষরবাহিত রূপ
আছে একটা। প্রশ্ন হলো - কথা জিনিসটা আসলে কী? - শব্দ ছাড়া কথার আলাদা কোনো অস্তিত্ব আছে কি না...
আপনি বললেন, "যা কথা হয়ে উঠবে না কখনো, তা শব্দও নয়"।... কিন্তু যদি কোনো কিছু কথা হয়ে
উঠে, তার কি শব্দ হয়ে না ওঠার কোনো উপায় থাকে?
"সংকেত শব্দ সৃষ্টির মাধ্যম" - ১০০% একমত; সংকেত হলো শব্দের ফাংশন। একটা শব্দ ঢোকালে আরো
অনেকগুলো শব্দ বেরিয়ে আসছে (মগজভেদে)।... বদলে যাওয়া শব্দ, কিন্তু শব্দই, অন্য
কিছু না। নাকি অন্য কিছু?
আমার মনে হয় - একটা অনুভব যতক্ষণে
"কথার" পর্যায়ে আসছে , ততক্ষণে
বা তার আগেই তা শব্দবন্দী / ভাষাবন্দী হয়ে পড়েছে। যা এক সূত্রে বন্দী করা যাচ্ছে না - তা হলো অনুভব। (কিন্তু অনুভব কী? এই নিয়ে আগে কথা হচ্ছিলো শমীকের সাথে।
হাতের স্পর্শ তো একটা সংবেদন। আমার মনে
হয় এর সাথে ভাবনার সরাসরি যোগ নেই। প্রচন্ড আগোছালো ভাবনাও আসলে অনেক সংগঠিত, সংহত - তার শব্দ লাগে। বা ভাবনা টেন্ডস টু শব্দ।
প্রত্যেকটা নাচের "মুদ্রার" (আমি
যতদূর জানি) একটা কিছু "প্রকাশ" করার থাকে। বিশেষ করে ভারতীয় নাচ তো
খুবই রূপকধর্মী। চোখের দৃষ্টি নিক্ষেপ থেকে শুরু করে সব কিছুর ভিতর একটা লক্ষ্য
আছে - যে দেখছে তাকে কিছু না কিছু বোঝানোর লক্ষ্য। কেউ সামনে না থাকলেও
নৃত্যশিল্পীকে কল্পনা করে নিতে হয় যে কেউ একজন সামনে আছে। তার প্রতি
নিবেদিত/উদ্দিষ্ট হচ্ছে নাচ। (ভুল বললাম?)
সুতরাং নাচকে আমার মনে হয় খুবই সাংকেতিক
একটা ক্রিয়া। সংকেত যেহেতু কথার(শব্দের) ফাংশন, নাচও কথার ফাংশন। যখন কেউ ছন্দহীন ভাবে এলোমেলো
লাফাতে থাকে, হাত পা ছুঁড়তে থাকে - আমরা কিন্তু তার কর্মটিকে নাচ
বলি না। বলি বাঁদরামি। কারণ তার সেই লম্ফঝম্প আমাদের ভিতর "কথা/শব্দ"
তৈরি করতে পারছে না। "অর্থ/শব্দ" তৈরি করতে পারছে না। তার নড়াচড়া আমাদের
কাছে যথেষ্ট ইঙ্গিতপূর্ণ বা সাংকেতিক মনে হচ্ছে না। সুতরাং কোনো আবেদনও তৈরি হচ্ছে
না।
ঠিক তেমনি স্পর্শও। কিছু স্পর্শে আমরা
চমকে উঠি, ভয় পাই (আত্মরক্ষা), বিরক্ত হই (অনাকাঙ্খিত ও পরিচিত স্পর্শ), আবার কিছু স্পর্শে আমরা বিদ্যুতস্পৃষ্টও হই
(আবেদনপূর্ণ , নতুন, বা
কাঙ্খিত স্পর্শ)।
এখন আসা যাক - আত্মরক্ষা কী? আকাঙ্খা কী? পরিচয়
কী? আবেদন কী? নতুন
কী? -- খুব গ্র্যানুলার স্তরে , এসেম্বলি ল্যাংগোয়েজের স্তরে ভাবলে আমার মনে হয়
চিহ্ন/শব্দ ছাড়া এগুলোর ব্যাপারে কোনো বোধ আমাদের ভিতর তৈরি হতে পারে না।
অর্ঘ্য – একটা কম্পিউটর প্রসেসরে সাধারণ যোগ,বিয়োগের
সংজ্ঞা মাইক্র-প্রোগ্রাম আকারে হার্ড-ওয়্যার করা থাকে। আত্মরক্ষা আর আঘাত পাওয়ার
ভয় মনে হয় সেইরকম। হার্ড ওয়্যারড - স্নায়ুযন্ত্রের মধ্যে। কিন্তু বাকীগুলোর অভিভাব
কিন্তু সামাজিক তথ্যকণার ভিতর দিয়ে ঢুকে যেতে পারে একটা মানুষের ভিতর। সামাজিক
তথ্যকণা নানা ধরণের চিহ্নছাড়া কীভাবে মগজে পরিবাহিত হবে বুঝতে পারি না।
"চেতনা" শব্দটা আমি বুঝতে পারি না। ঠিক যেভাবে
"আত্মা" শব্দটা আমি বুঝতে পারি না। শব্দ দুইটা আমার অত্যন্ত প্রিয়।
কিন্তু আমি এদের বুঝতে পারি না। আমি কি একটা মানুষ না একটা রোবট? আমার ভিতরে কি "মন" বলে কিছুই নাই ! হা হা
হা... আমি সত্যি জানিনা...
বাচালতার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। এতো সুন্দর
/ এতো চিন্তাপ্রসূত পোস্টের জন্য অনেক ধন্যবাদ দোলনচাঁপা আপনাকে... আরো "কথা" হোক দোলনচাঁপা, আপনার সাথে - এবং আরো সবার সাথে - সবার। এমনকি সব কথা
থেমে গিয়ে কবিতাও হোক। কবি রাদ আহমেদ এর কাছ থেকে ধার করে বলি – “কথার যেখানে শেষ, কবিতার তো সেখানেই শুরু।” ভাল থাকুন সবাই।