Tuesday, December 14, 2010

santanu bandopadhyayer kabitaa

মানচিত্র (অ)বিষয়

মানচিত্রের বাঁকা দাগে গুছি গুছি ঘাস
দেখতে দেখতে সোফা থেকে ধড়াম
কা আ তরুবর বলতেই কী হাসি ভদ্রলোকের!

পালতোলা জীবাশ্মের ঘুঁটি উপত্যকার পাথরে -
সে কবে সে কবে বলতে বলতে
বুলবুল নাচানোর পালা শেষ, সে শুধু গানে গানে

মোটা কাচের নীচে ঘাসগুলো খণ্ড খণ্ড ভাঙা রেখা
খাড়া ঢাল পাথরের বরফ জমেনা ।
ঘাস লটকানো খাঁজে, খাঁজে বলতেই কী হাসি!
হাসতে হাসতে ভেড়ারা একে অন্যেরা গায়ে ঢলে ঢলে পড়ে

নামতে নামতে চামড়া থেকে লোম-ছাড়ান
নতুন লুঙ্গি পড়ে আনোয়ার শাহ ।
সঙ্গে তার বিবি, বিবিজান, পোলাপান, বেবাক গুষ্টি-গতর।
ব্যবসার পুরোটাই পথ। 
দেখাশোনা ফ্রি, কেনাকাটা ব্যক্তিগত
হকারের গলায় আবার ছেটকানো হাসি।


কখোনো যাইনি নর্মদায়
ম এর রেফে এদিক ওদিক দিয়ে ঘোরাঘুরি এই শুরু।

নরম ছানা
শরীরের নরম
নরম তুলোর গড়িয়ে আসা ট্র্যাক
নির্দেশ করো; খুঁটিয়ে তুলে নাও সিসের ডগায়

রেফের পাশে প্রেমের বাসা
খিলখিল মহিলা নাকী জঙ্গলে আচমকা এসে ভাত চান
ভ থেকে পর্যবেক্ষণ করলে চমৎকার শীর্ষ দেখা যায়
ওল্টালেই তৎক্ষনাৎ গড়িয়ে পড়বার স্পৃহা
ফলে গোটা এলাকাটাতেই একটা প্রস্থচ্ছেদ নেওয়া
মানচিত্রে গ্রস্ত উপত্যকা

ছড়টানা জলের সুরধ্বনিরও একটা শেষ থাকে
যোসেফ বলেছিল গঙ্গার উৎস থেকে জল নিয়ে
পায়ে হেঁটে দক্ষিণ গোলার্ধে গেলে নর্মদা পেরোনো চলে না।
ম এর নরমের পাশে কী যে আকর্ষণ
তাকে এড়িয়ে এড়িয়ে পরিক্রমা টেবিলের ওপর।


মিথ্যের মধ্যেও মিথ

চরণ হেমব্রম সব কথার শুরুতেই এখন জুড়ে দেন
কথা, পৌঁছলে তার এখন প্রকট হয়ে পড়ে
এখন মানে আগে নয়?
না তা লয়, এখন কথা হল সকল সময় সুমান হচ্ছে না, হচ্ছে কি না!

শব্দে সেতু নেই। শহর কান পেতে মিথের মধ্যে কী খুঁজে পায়?
কনট্যুর রেখার তফাৎ থেকে আরও সরলীকরণ করা হল।
সমান জমি, ক্ষণিক পাহাড়, বাঁধের লাশ, রিলিফ পথ

-খ্যাত্যে দেঁ - রাতদুপুরে বুড়ি এসে বাংলোর নীচ থেকে
বললেই পিলে চমকে যায়।
ও পথে আমি আমাদের আমাদিগের ভ্রম ও ভ্রমণ

মানচিত্রে মরীচিকার কোনো স্থান নেই
তার খোঁজে খোঁজে এতোল বেতোল
আচ্ছা আমার পাগলাকে আপানারা দেখেছেন কেউ
জনে জনে জনে জনে জনে জনে জনে জনে জনে জনে

জিজ্ঞাসা চলে


কতো নীচে শুকনো মাংস জামা পড়া হাড়

বাঘ এসে থেমে গিয়েছিল
তারপর সাপ
তারপর
খুঁটে খুঁটে থ্রি ডি ইমেজ

পড়া নয় স্রেফ খেলা আতশ-চশমার তলায়
জ্যান্ত ত্রিমাত্রা, সরালেই ভ্যানিস
মুকুলের বিশ্বাস হয়নি, সত্যজিতেরও না,
হাইজেনবার্গেরও না।
জ্যান্ত ত্রিমাত্রা, মাইরি বলছি
মাকালির পা ছুঁয়ে বল, এ কাজ তোর নয়
এসব ভ্যানতারা সেই গ্যালিলিওকেও বলেছিল
চায়ের বাষ্পের গায়ে জল
ভেজা দার্জিলিং সুখী গৃহকোণ
চাদর জড়ানো রূপের কুণ্ডের কাছে অচানক মেঘ
উত্তাল হাওয়া, ঝড় হয়ে ওঠার আগেই
ম্যাপ গুটিয়ে যথাস্থানে রেখে অন্ধকারে নাম
নাম বলছি।


সব চলবে ক্যারাটেও!
পথ হারালে ম্যানড্রেকের প্রিয় বন্ধু লোথারের কথা মনে পড়ে
লোথার, অর্জুনের ছোটোভাই
দুপাশে সাদা হয়ে আসা চরাচরের মাঝে
চিকন পাহাড়ের ধার, তার ওপর অর্জুন কা কুর্সি
সেখানে লোথার নয়ত কে?

- ডিম দাঁড় করাবার খেলা প্রথম কে দেখিয়েছিল?
- জলে কুমির ডাঙায় বাঘ প্রবাদের প্রবক্তা কে?
- হাস্নুহানা ও সাপের সম্পর্ক কী?
- শহরের ইঁদূর ও গ্রামের ইঁদূরের মধ্যে প্রভেদ কী কী?
- গড্ডালিকা প্রবাহের সংগে ভেড়ার সম্পর্ক আবিষ্কার করে কে?

ক্রমাগত পরিভাষা গঠন চলতে থাকে
সীমাহীন বিন্যাস ও সমবায়
গ ঠ ন তার মাঝে ফাঁক ভরাতে এক একটা
থিয়োডোলাইট পোঁতা হয়।
ব্রানটন কম্পাস নিয়ে দিকে দিকে ছাত্ররা বেড়িয়ে পড়ে
         ক্রমশ নানান মাপে মানে অঙ্গসজ্জা বদলাতে থাকে
বদল বদল ব দ ল ব                    
প্রভূত নতুন কথারা দ্রুত সেঁধিয়ে যায় তৈরী হওয়া ফাঁকে

মানচিত্রে ফের আরেকটা ধারক লেখা হয়।

4 comments:

  1. খুব ভালো লেখা। মায়েস্ত্রো মাঠে নামলেন ফের!

    ReplyDelete
  2. যেটা আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে, সেটা ওই শেষ ছত্র, মানচিত্র গড়া হচ্ছে, সেই প্রসেসটাকে কবি তথ্যায়িত করছে, আবার মানচিত্র নির্মাণের মাধ্যমে জমি বা ল্যান্ডস্কেপকেও চেনা হচ্ছে। মানচিত্র কবিতার, কবিতা বা শিল্প রচনারও, নির্মীয়মান বাক্যের মধ্যে, শব্দের ফাঁকে নতুন শব্দ গলিয়ে তৈরি। কাজেই মানচিত্র নির্মানের মধ্যে দিয়ে কবিতার নির্মাণপ্রক্রিয়াকে ধরতে চাওয়ার প্রবণতাটা কবিতার বড়ো অর্জন।

    ReplyDelete
  3. দ্যাখ,ও দৃশ্য তৈরি করতে চাইছিলো, দৃশ্য ও তার কোলাজ দিয়ে গড়তে চাইছিলো পরিবিষয়কে, আর এখন, গড়লো ভূদৃশ্য, এবং তাকে দেখালো মানচিত্র নির্মাণের উ্ৎপন্ন হিসেবে।

    ReplyDelete
  4. মানচিত্র নির্মাণ - অদ্ভুত...

    পরিবিষয়কে এখনও ঠিকঠাক বিষয় করে উঠতে পারিনি। কিন্তু এই সব আলাপ আলোচনাগুলো চিনিয়ে দিচ্ছে পরিবিষয় কী। আর্যনীল যেটা বললেন মানচিত্র নির্মাণের মাধ্যমে জমি বা ল্যান্ডস্কেপকেও চেনা হচ্ছে - সঠিক। প্রতিটা ক্যারেক্টার অদ্ভুত ভঙ্গিমায়, তাদের দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তর ভ্রমণ ভারি সুন্দর এক গ্রন্থনা যেন। জ্যান্ত ত্রিমাত্রা, সরালেই ভ্যানিস - সেই সময়ের মুকুলের মুখটা মনে পড়ছে। বিষয় থেকে বিষয়ে এই পরিভ্রমণ, অথচ (অ)বিষয় - দারুণ প্রেজেন্টেশান।

    ReplyDelete